এরশাদকে এখনই মহাজোট ছাড়তে বললেন দলের নেতারা

আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট ছাড়তে আরেকটি প্রেসেডিয়াম বৈঠক পর্যন্ত নেতাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ।
গতকাল প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী চলা পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকে একজন ছাড়া সবাই এ মুহূর্তেই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিতে চাপ দেন এরশাদকে। মন্ত্রিসভায় থাকা দলটির একমাত্র সদস্য জিএম কাদেরকে এখনই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন নেতারা। গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে হাজির হয়েই সরকার এবং শাহবাগের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, দেশ আজ ভয়াবহ সঙ্কটে। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির করণীয় কি সে বিষয়ে আপনারা খোলামেলাভাবে কথা বলুন। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হবে। আজই আমরা বড় ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি। জাতির কাছে আমি দালাল হিসেবে চিহ্নিত হতে চাই না। কোন কোলাবরেটর হয়েও থাকতে চাই না। আপনারা আজ যে মতামত দেবেন তার ওপরই আমি সিদ্ধান্ত নেবো। এরশাদের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বক্তব্য শুরু করেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন। তিনি এরশাদের নানা কাজের প্রশংসা করে বলেন, মহাজোট ছাড়তে আর এক মুহূর্তও দেরি করা যাবে না। এডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ আজ জাতীয় পার্টিকে মহাজোটে দেখতে চায় না। অতিসত্বর মহাজোট থেকে বের হয়ে আসুন। এসএমএম আলম বলেন, আপনি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে ছিলেন তখন ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি আর মহাজোটে নেই। এরপর জিএম কাদের কিভাবে মহাজোটের মন্ত্রিসভায় থাকেন? শেখ হাসিনার সঙ্গে কিভাবে ক্যাবিনেট বৈঠক করছেন? এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে এ সভা থেকে জিএম কাদেরকে পদত্যাগ করতে বলুন। ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী বলেন, ২ নেত্রী দেশকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছেন তা থেকে মানুষ পরিত্রাণ চায়। শেখ হাসিনা আপনাকে যেভাবে অপমান করেছেন আপনি ক্ষমতায় গিয়ে তার প্রতিশোধ নিন। গোলাম মসিহ বলেন, আপনার সরলতা ও বদান্যতার সুযোগ নিয়ে গত ৪ বছরে কেউ কেউ অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। সুবিধাভোগীরা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধাগ্রস্ত করেছে। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার চরমভাবে ব্যর্থ। জনগণ সরকারের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ, হতাশ। এলাকার মানুষ আমাদেরকে মহাজোট ছাড়তে বলছে। তবে আমি মনে করি এ মুহূর্তে মহাজোট ছাড়া ঠিক হবে না। আরও সময় ক্ষেপণ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সর্বশেষ বক্তা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণ আপনার নেতৃত্বাধীন তৃতীয় শক্তির উত্থান দেখতে চায়। আর এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে মহাজোট পরিত্যাগ করুন। এরপর এরশাদ বলেন, আমি, আপনাদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পেরেছি। শিগগিরই আবার প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডেকে আমি দলের সিদ্ধান্তের কথা দেশবাসীকে জানিয়ে দেবো। এদিকে বেঠক শেষে গুলশানের এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন- মহাজোট পরিত্যাগ এবং সহিংস রাজনীতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডিয়াম সভায় দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান সবার মতামত নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই আবার প্রেসিডিয়ামের বৈঠক হবে। এর আগে তৃণমূল পর্যায়ের মতামত নেয়া হবে। এরপর পার্টির চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত জানাবেন। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে হরতাল ও সহিংস রাজনীতির বাইরে বিকল্প উপায় বের করা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান সব রাজনৈতিক দলকে  সুস্থ ও শান্তির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক ও দলীয় সরকার নিয়ে বড় দু’দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তার (এরশাদের) সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব নিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডিয়ামের সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জিএম কাদের, এমএ সাত্তার, নাসিম ওসমান, আবুল কাশেম, এমএ হান্নান, গোলাম হাবিব দুলাল, আলহাজ্ব করিম উদ্দিন ভরসা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, ব্রি. (অব.) কাজী মাহমুদ হাসান, জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল, মোস্তফা জামাল হায়দার, ফকির আশরাফ, কাজী ফিরোজ রশীদ, এডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক, অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, মুজিবুল হক চুন্নু, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সৈয়দ আবু হাসেন বাবলা, একেএম মাইদুল ইসলাম, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সুনীল শুভরায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.