মানহীন দুই কোম্পানির ভিটামিন খাওয়ানো হয়েছিল শিশুদের

ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুল ও কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে দেশব্যাপি শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সরকার তা গুজব বলে চালিয়ে দিলেও এখনো সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি অনেক শিশু।
এর নেপত্যের অনেক তথ্য ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। নকল ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুল খাওয়ানো হয়েছে শিশুদের এই কথাটি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজেও স্বীকার করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে স্বীকার করেছেন সংবাদ মাধ্যমে। নকল ভিটামিন সরবরাহের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। অথচ সরকার শুরু থেকেই চেয়েছিল ব্যাপারটিকে রাজনীতিকরণ করতে। বিষয়টি একটি বিশেষ মহলের প্রচারণা বলে চালিয়ে দিয়েছিল।
ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে গত ১২ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় কোম্পানি অলিভ হেলথ কেয়ার, কানাডিয়ান কোম্পানি বেনার করপোরেশন ও বাংলাদেশের কোম্পানি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের ভিটামিন খাওয়ানো হয়েছে শিশুদের। এর মধ্যে কানাডিয়ান ব্যানার করপোরেশন ছাড়া বাকী দুই কোম্পানির ভিটামিন তৈরির কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। অলিভ ও গ্লোবের এ সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট (জিএমপি) নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জেনে-বুঝেই নকল ও মানহীন ভিটামিন খাইয়েছে শিশুদের।
বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নকল ও ভেজাল ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ১০ বছর পরে হলেও দেখা দেয়। নারী পক্ষের নেত্রী সামিয়া আফরিন এই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি তাহলে একটি প্রজন্মকে জেনে-বুঝেই শেষ করে দিলাম ?
শিশুদের নকল ও ভেজাল ওষুধ খায়ানোর বিরুদ্ধে আজ শনিবার ‘স্বাস্থ্য আন্দোলন’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। স্বাস্থ্য আন্দোলন, ‘ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট : জনমনে আতঙ্ক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদা আখতার বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঠিক ব্যাখ্যা দাবী করেন। আগামী এক সপ্তাহ পর এ ব্যাপারে সরকারের যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা না পেলে প্রয়োজনে মামলা করবেন বলে জানালেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিশু চিকিৎসক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. শাহাবুদ্দিন, নারীপক্ষের সামিয়া আফরিন, আইনজীবী এস এম সৈকত প্রমুখ।
ফরিদা আখতার বলেন, ওষুধগুলো নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে খাইয়েছে। শিশুর অসুস্থতা দেখেও তা গুজব বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। তা সত্বেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। প্রতিকারের কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও বলেনি এখন পর্যন্ত। ফরিদা আখতার স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবী করেছেন, ‘যদি ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তানাহলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ টিকাদান কর্মসূচী নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। অবিলম্বে এ বিষয়ে জনগণকে স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে। পরবর্তি ধাপে খাওয়াবার আগে এই ওষুধের মান এবং দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে।’
ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, শিশুদের ভিটামিন-এ খাওয়ানোর আগে শিশু চিকিৎসকদের সাথে সরকার কোনো প্রকার পরামর্শ করেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাতকানা রোগের পরিমাণ খুবই কম। রাতকানা দুর করার জন্য সকল শিশুকে ভিটামিন-এ খাওয়ানোর দরকার নেই। কোন কোন এলাকায় শিশুদের রাতকানা আছে অথবা দরিদ্র পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.