পরিবর্তন দরকার সঠিক স্থানে by তৌহিদা

এক লাখ সাতচলি্লশ হাজার বর্গকিলোমিটারের আমাদের এই দেশ তার প্রায় চলি্লশ বছরের স্বাধীন জীবনে খুব সামান্যই অর্জন করতে পেরেছে। এর কারণ এ দেশের মানুষ সকল মানুষ নয়, হাতে গোনা গুটিকয়েক মানুষ যারা দেশটিকে পরিচালনা করে আসছেন।
তাদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত দেশকে এগোতে তো দিচ্ছেই না, বরং কয়েক ধাপ পিছিয়ে দিচ্ছে। আমার চোখে দেশের বিভিন্ন কাঠামোতে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো অতি শীঘ্রই আনয়ন করা দরকার। ১) সরকারী দলের মনমানসিকতা : আমাদের দেশে যখনই কেউ মতায় গেছে তখনই বিগত সরকারের দিকে দোষারোপ আর বিরোধী দলের দিকে কাদা ছোড়াছুড়িতে মেয়াদের সময়টা শেষ করেছে। নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে প্রতিবারই রাজনীতিবিদরা ভুলে যাচ্ছেন। বড়ই ভুলোমনা জাতি আমরা। আমি আশা করব বর্তমান মহাজোট সরকার অতীতের সরকারগুলোর মতো ভুল করবে না। তারা দেশের উন্নয়নের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে কাজ করে যাবে বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে।
২) বিরোধী দলের মনমানসিকতা : আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থায় বিরোধী দলের ভূমিকার কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। বিরোধী দলের কাজ সরকারের কাজের ভুলত্রুটি জনগণের সামনে তুলে ধরা, সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি করা, পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয়া নয়। আমাদের দেশের সম্মানিত রাজনীতিবিদরা বিরোধী দলে গেলে তাদের অবস্থানের কথা ভুলে এমন সব কাজ শুরু করে দেন যা বলার অপো রাখে না। সামান্য আসনের উছিলা দেখিয়ে সংসদ বর্জন করা, কোন প্রকল্পের বিষয়ে না জেনে তার বিরোধিতা করা শিতি বিরোধী দলের েেত্র শোভা পায় না। বিরোধী দলের কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা, তবে অবশ্যই তা হবে দেশের প,ে জনগণের প েমঙ্গলজনক কাজের নয়। বর্তমান এবং ভবিষ্যত বিরোধী দলের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে দেশের উন্নয়ন কোনদিনও সম্ভব হবে না।
৩) সিদ্ধান্ত গ্রহণে : আমাদের দেশ সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে। সরকার চায় সুশিতি নাগরিক। বই মুখস্থ করে পরীা পাস করে বড় বড় ডিগ্রী পাওয়া ছাড়া আমাদের দেশ কী-ইবা দিতে পেরেছে। পরীা পদ্ধতির পরিবর্তন করা হচ্ছে, যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা গাইডনির্ভর হয়ে না পড়ে। গাইড বই, কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে হলে শিা ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এসবের দমন সম্ভব নয়।
বিদু্যত সাশ্রয় করার জন্য ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে এনে জনগণকে কম ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। সিদ্ধান্তটা সঠিকই ছিল। ভুলটা হয়েছে সঠিক সময়ে তা আবার না পেছানোতে। ভবিষ্যতে সরকার এ দিকটায় নজর দেবে বলে আশা রাখি। তবে বিদু্যত সাশ্রয়ের জন্য সবচেয়ে বড় উপায়টা হচ্ছে বিদু্যতের অপচয় রোধ করা। বাসা-বাড়িতে অফিস-আদালতে শিল্প কারখানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, বিশেষ করে যে সকল জায়গাতে বিদু্যত বিল ব্যবহারকারীর পরিশোধ করতে হয় না সেসব জায়গাতে বিদু্যতের বিপুল পরিমাণ অপচয় হয়। এই অপচয়ের পরিমাণ বিদু্যতের মোট উৎপাদনের ২০-৩০% বা তারও উপরে। সরকারের উচিত এই অপচয় রোধ করে বিদু্যত সাশ্রয় করা এবং অপচয়কৃত বিদু্যত দেশের স্বার্থে ব্যবহার করা।
টিপাইমুখ বাঁধ, ট্রানজিটের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বার্থে সরকারের উচিত আরও বিশ্লেষণ করে দেখা। অতীতের ভুল থেকে সরকার শিা নিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। সরকারের উচিত হবে ভবিষ্যতে মতায় আসার জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য, উন্নয়নের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবাযন করা।
৪) শিা কাঠামোতে : আমাদের এমন অনেক কিছু পড়তে (মুখস্ত করতে) বাধ্য করা হচ্ছে যা কোনদিন কোন কাজে লাগবে না, যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন নিয়োগ পরীায়, নিবন্ধন পরীায় সাধারণ জ্ঞানের নামে যেসকল প্রশ্ন দেয়া হয় তা মোটেও সাধারণ নয়, অসাধারণ ব্যক্তিদের চিন্তার ফসল। এর চেয়ে যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এর অন্তভর্ুক্ত করা হতো তা হলে বরং ভাল হতো। আবার যেখানে যে কাজ সে কাজের বিষয়ে পরীা নেয়া যেতে পারে।
বাড়তি জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে শিা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু সে হারে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা, বই, শিক দেয়া না হলে শিতি যুবক না বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলো থেকে কিছু রোবট বের হবে, যারা কোন কাজ করতে শেখেনি, শিখেছে কিছু বই মুখস্থ করতে। মুখস্থ করা বিদ্যা দিয়ে টাকা উপার্জন করা যায়, কিন্তু নতুন কিছু আবিষ্কার করা যায় না। সরকারের উচিত হবে শিা কাঠামোকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা। মাতৃভাষার জন্য আমাদের জাতি রক্ত দিয়েছে। বিশ্বের সব উন্নত জাতি তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিা দিয়ে থাকে। তবে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? মাতৃভাষায় পাঠদান করতে পারলে তা যেমন সহজবোধ্য হবে, তেমনি তা গড়ে তুলবে সুশিতি একটি জাতি, যারা গড়ে তুলবে সুন্দর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
লেখক : শিার্থী, বায়োটেকনোলজি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.