প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর by হাসান সায়ের

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে গত ১৩ জানুয়ারি বুধবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি যখন সফর সম্পর্কে বলছিলেন বাইরে তখন অগণিত মানুষের অপো।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, র্যাব, সোয়াত ও গোয়েন্দা বাহিনী। তবুও আওয়ামী লীগ নেতা-কমর্ী ও অগণিত মানুষের উপস্থিতির কাছে নিরাপত্তা বলয় বড্ড ঠুনকো বলেই মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সফর শতভাগ সফল বলে দাবি করেন, যা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটাবে। এ সফরে বৈরিতাকে পদদলিত করে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর মধ্যে দিল্লীর হায়দারাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত দ্বিপাকি বৈঠকে তিনটি চুক্তি ও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বারিত হয়। চুক্তিগুলো হলো সাজাপ্রাপ্ত বন্দী বিনিময় চুক্তি, অপরাধ দমনে আইনী সহায়তা বিনিময় চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সংঘটিত অপরাধ ও অবৈধ মাদক দ্রব্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত চুক্তি। মনমোহন সিং বাংলাদেশের জন্য এক শ' কোটি ডলার ঋণ সহায়তা ও অনুদান, আড়াই শ' মেগাওয়ার্ট বিদু্যত সরবরাহের অঙ্গীকার করেন। এছাড়াও ৫০ দফার যৌথ ঘোষণায় রয়েছে সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত বিরোধ, পানি বণ্টন, বাণিজ্য, বৈষম্য দূর। দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার দেয়া হয় গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার বিশেষ অবদানের জন্য। ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কারটি তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন এবং এ পুরস্কারের অর্থ বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে প্রদানের ঘোষণা দেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে।
নিরাপত্তা বিষয়ক যে চুক্তিগুলো স্বারিত হয় তা দুই দেশের সন্ত্রাসবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই এক দেশের সন্ত্রাসীরা অপরাধ করে অপর দেশে বেশ শান্তিতেই অবকাশ যাপন করে। বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয় এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি ক্যাপ্টেন মাজেদ (অব) ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতে আশ্রয় নেয় বলে জানা যায়। অপরদিকে ভারতের উলফা, দাউদ ইব্রাহীম, লস্কর ই তৈয়বার সদস্যরা নিয়মিত বাংলাদেশে অবাধ যাতায়াত করছে। সেেেত্র নিরাপত্তা চুক্তিগুলো দুই দেশের সন্ত্রাস দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও চুক্তিগুলো বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত দেশপ্রেমীকের উলফা নামক খোঁড়া যুক্তির কবলে পড়ে।
ভারত বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়ার্ট বিদু্যৎ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এ সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে বিদু্যত উৎপাদন না বাড়িয়ে ভারত থেকে বিদু্যত আনলে ভারতই লাভবান হবে। এতে বিদু্যতের বাজার ভারতের হাতে চলে যাবে বলে বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন। বিদু্যত উৎপাদনে বর্তমান সরকারের নেয়া নানা পদপে সম্ভবত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ীণ দৃষ্টিতে এখনও ধরা পড়েনি। ২০০১-২০০৬ সালে বিদু্যতের বাজার কেউ নষ্ট না করলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ১ মেগাওয়ার্ট বিদু্যত উৎপাদনে সম হয়নি। টিপাইমুখ নিয়ে বিএনপির ঠোঁটদ্বয় ইদানীং বেশ ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। যদিও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তা সোনামুখী সুই দিয়ে সেলাই করা ছিল। সদ্য হাঁটতে শুরু করা বর্তমান সরকারের কাছে টিপাইমুখের সফল সমাপ্তি তারাই আশা করে যারা বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী যদি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে বলতেন বাংলাদেশের জন্য তিকর কোন পদপে নেয়া হবে না তবে জোট সরকার কি করত ? তারা কি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করত নাকি হাওয়া ভবনের হাওয়ার তোড়ে বদলে দিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অবস্থান? সেেেত্র বেগম জিয়ার ভূমিকা কি হতো তা জানার সুযোগ না আসলেও বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এটা ঠিকই জানেন ভারত সফরে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গঙ্গার পানি বণ্টনের কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির মধ্যে যদি বাংলাদেশের কোন দুর্বলতা থাকে তা অবশ্যই আলোচনা-সমালোচনার দাবি রাখে। তবে যিনি প্রশংসাযোগ্য তাঁর প্রশংসা করলে কারও ইমেজ এক পরমাণু পরিমাণ কমে না বরং বাড়ে।

লেখক : ছাত্র, সরকারী তোলারাম কলেজ
নারায়ণগঞ্জ

No comments

Powered by Blogger.