দৃষ্টিনন্দন তোরণ স্কুল সড়ক দ্বীপ পাঠাগার জাদুঘর- শহীদ জব্বারের স্মৃতিধন্য পাচুয়া গ্রাম by বাবুল হোসেন

 গফরগাঁওয়ে ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বারের নিজ গ্রামের বাড়ি পাচুয়ায় কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারের স্থলে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার, শহীদ জব্বার পাঠাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, জব্বারের নামে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়।
পাকা সড়ক, তোরণ, সড়কদ্বীপ ও চত্বরসহ নানা কিছু। এ সবকিছুই করা হয়েছে ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতিকে ধরে রাখতে। প্রতিবছর একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে পাচুয়ার আশপাশের সাত গাঁয়ের মানুষ এই বীর শহীদকে মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানায় বর্ণিল ফুলেল ভালবাসায়। 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি'-গানে আর সুরে সারি সারি জনতার প্রভাতফেরি শেষে দিনভর আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জব্বার মেলা আর চলচিত্র প্রদর্শনীতে নানা বয়সী মানুষের গমগম করা ভিড়ে উৎসবমুখর হয় জব্বার নগর গ্রামের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। উপজেলা পরিষদের অর্থ সহায়তা আর স্থানীয় লোকদের শ্রম এই মিলে হয়েছে শহীদ মিনার, স্কুল। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গফরগাঁও ভালুকা সড়কে দুই কিমি পাকা সড়ক, এই সড়কের প্রবেশপথে শহীদ জব্বার তোরণ, গফরগাঁও উপজেলা সদরের চাঁদনী সিনেমা হল মোড়ে সড়ক দ্বীপ ও শহীদ জব্বার চত্বর করা হয়েছে ভাষাশহীদ জব্বারকে স্মরণীয় করে রাখতে।
গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরের গ্রাম পাঁচুয়া। সবুজ ছায়াঘেরা এই গ্রামেই জন্মেছিলেন '৫২-এর ভাষা আন্দোলনে শহীদ বীর সনত্মান আব্দুল জব্বার। ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ির ওষুধ কেনার জন্য হাসপাতালের বাইরে গিয়ে মিছিল দেখে যোগ দিয়েছিলেন। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' আন্দোলনের এই মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকের সঙ্গে শহীদ হন পাঁচুয়ার এই বীর সনত্মান। এর পর কেটে গেছে বহু দিন। সেদিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ফসল দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলা পেয়েছে আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা। তবে ভাষাশহীদ জব্বারই বা কেন উপেতি থাকবে। আর তাই গর্বিত এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে শহীদ জব্বারের স্মৃতিকে ধরে রাখতে জব্বারের নিজ গ্রাম পাচুয়ায় প্রতিষ্ঠা করেছে 'ভাষাসৈনিক শহীদ আব্দুল জব্বার পাঁচুয়া পূর্বপাড়া রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়'। একই সমযে গ্রামবাসী প্রতিবছর একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে জব্বারের বাড়িতে কলাগাছ পুঁতে শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাত। পরে ভাষাশহীদ জব্বারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পাচুয়া গ্রামে গত ২০০৫ সালে স্থায়ীভাবে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। গত ২০০৮ সালে একই স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে ভাষাশহীদ জব্বার পাঠাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন লাইব্রেরিয়ানসহ একজন কেয়ারটেকারকে। পাঠাগারে দেয়া হয়েছে সাড়ে তিন হাজার বই। চলতি বছর এই পাঠাগারের জন্য আরও বই দেয়া হয়েছে। স্থানাভাবে এসব বই রাখা হয়েছে পাঠাগারের স্টোররম্নমে। তারপরও এই পাঠাগারে বই পড়ার পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়ারও সুযোগ পাচ্ছে গ্রামের পাঠকসহ দর্শনার্থীরা। তবে পাঠাগারে জব্বারের জীবন ও কর্মের ওপর এককভাবে কোন বই না থাকায হতাশ দর্শনার্থী ও স্থানীয় পাঠকেরা। এছাড়া শুক্রবারের ছুটির দিনটিতে পাঠাগার বন্ধ থাকায় এলাকার ছাত্রছাত্রীরা পাঠাগারে বই পড়ার কাঙ্ৰিত সুযোগ পাচ্ছে না বলে অনুযোগ গফরগাঁও চরআলগীর চরমসলন্দ গ্রামের কলেজছাত্রী আসমা ও তানিয়ার। জাদুঘরটিতেও এখন পর্যনত্ম জব্বারের স্মৃতিবিজড়িত কিছু রাখা হয়নি। পাঠাগার ও শহীদ মিনারের সামনে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিও দিন দিন এগিয়ে চলছে ভাষাশহীদ জব্বারের স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সহায়তায় স্কুলটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। এসব কারণে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে আশানুরূপ বাড়ছে না স্কুলটির পড়ালেখার মান। স্কুলের অনেক ছাত্রছাত্রী এখনও তেমন কিছু জানতে পারছে না ভাষাশহীদ জব্বার সম্পর্কে। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ভাষাশহীদ জব্বারের ঘনিষ্ঠ সহচর মাওলানা আব্দুল হাই রনভাওয়ালি (৬৫)। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক এএইচএম আসাদ (নয়ন) জানান, একটি ছাপরা ঘর আর গুটি কয়েক ছাত্রছাত্রী নিয়ে একদিন স্কুলটির যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল। পরে উপজেলা পরিষদ, এডিবি ও ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় আজকের এই টিনশেডের পাকাঘরটি করা হয়। স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দান করেন প্রধান শিক ও শহীদ জব্বার পরিবারের সদস্য এএইচএম আসাদ। স্কুলে পাঁচ শিক-শিকিা ও দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে বর্তমানে। শিকদের বেতন সমস্যা ঝুলে আছে এখনও। এলাকাবাসীর দাবি স্কুলটি সরকারী করা হলে এসব সমস্যা থাকবে না। শহীদ জব্বারের আত্মা বেঁচে থাকবে এই পাঠাগার, জাদুঘর, স্কুল ও শহীদ মিনার ঘিরে।

No comments

Powered by Blogger.