সার নিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয়, বসত্মায় ২ থেকে ৪ কেজি কম

আবারও সার কেলেঙ্কারির চেষ্টা! জিয়া সার কারখানা থেকে উৎপাদিত প্রতি ৫০ কেজি সারের বসত্মায় ওজনে কম হচ্ছে দুই থেকে চার কেজি। কৌশলে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে কৃষকরা।
বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে সারের সঙ্কট। কোথাও-কোথাও জিয়া-ইউরিয়া সার বিক্রি বন্ধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ডিলার, ৰুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরম্ন করে কৃষকদের মধ্যে অসনত্মোষ দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। ৰুদ্র ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, প্রতি বসত্মায় সারের পরিমাণ কম থাকার কারণে সার বিক্রি কম হচ্ছে। সেই সঙ্গে বসত্মায় যে সার কম থাকাছে ওই সারেরও টাকা ওঠাতে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছে সার। সাধারণ কৃষকদের বক্তব্য, কেজি ও বসত্মা যে কোনভাবে সার কিনলেই প্রতারিত হতে হচ্ছে। অন্য সারের চেয়ে কেজি প্রতি ২/৩ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। যে কারণে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা কৃষি বিশেষজ্ঞদের। অনেকেই বলছেন, খাদ্যে লৰ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কৌশলে এ কাজ কেউ করাতে পারে। এদিকে বসত্মাপ্রতি সার কম হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, জিয়া সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনি। তিনি বলেছেন, সুনাম ৰুণ্ন্ন করতে কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে। তবে সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী কারখানা পরিদর্শনের সময় প্রতি বসত্মায় সার কম দেয়ার ঘটনা ধরা পড়ে! জিয়া সার কারখানার এমডির অভিযোগ অস্বীকারের প্রেৰিতে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, সুনামগঞ্জের শালস্না উপজেলার চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস। তিনি বলেছেন, প্রতি বসত্মায় ওজনে সার কম হওয়ার হাজারো প্রমাণ হাতে আছে।
এদিকে সম্প্রতি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)-এর এক গবেষণায় বাজারে প্রচলিত সারের ভেজাল ধরা পড়েছে ৫২ শতাংশ। ইতোমধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। গবেষকরা বলছেন, ভেজাল সারের কারণে মাটির গুনাগুন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এর ফলে উৎপাদন লৰ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে। এ প্রেৰিতে প্রতি বসত্মায় সার কম হওয়ার নেপথ্যে অন্য কোন কারণ আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন আছে? শুধু সুনামগঞ্জ বলে কথা নয়। সিলেট বিভাগের প্রায় সব জেলা উপজেলার চিত্র ঠিক এরকম। প্রতি বসত্মায় সার কম হওয়ার অভিযোগ সাধারণ কৃষক থেকে শুরম্ন করে ছোট বড় অনেক ব্যবসায়ীর। নেত্রকোনার পূর্বধলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে সার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জিয়া সার কারখানা এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও আছে এ ধরনের হাজারো অভিযোগ। সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ও বিসিআইসির চেয়ারম্যান জিয়া সার কারখানা পরিদর্শনে গেলে প্রতি বসত্মার ওজন কম হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে শুরম্ন হয় হইচই। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কারখানা কতর্ৃপৰ নানা কায়দায় দায় এড়াতে চেষ্টা করে। এদিকে জিয়া কারখানার ঘাটে বাফার ৯০ হাজার টন সার আমদানি করার কথা কয়েক দিনের মধ্যেই। বর্তমানে এসেছে ৪০ হাজার টন। ঘাট থেকে সার পরিবহনের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি নিয়ম অনুযায়ী ঘাট থেকে কারখানায় সার রাখার কথা। কিন্তু সার গুদামজাত না করে ঘাট থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ পরিবহন ব্যয় ওঠানো খরচের খাতায়। বলতে গেলে সার পরিবহনের অর্থ পুরোটাই লুটপাটের খাতে অনানুষ্ঠানিক বরাদ্দ। কারখানা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন জিয়া সার কারখানায় উৎপাদিত সারের পরিমাণ ১৪০০ মেট্রিক টন।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে চাহিদার ৭০ ভাগ সার মজুত আছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যনত্ম সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে সরকারের বাফার গুদামে মজুত রয়েছে সাত লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন। আরও দুই লাখ টন সার আছে ডিলারদের হাতে। স্থানীয় কারখানা ও আমদানির মাধ্যমে আগামী তিন মাসে আরও ৮ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন সার সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে বাজারে প্রচলিত সারের ভেজাল ধরা পড়েছে ৫২ শতাংশ। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) সম্প্রতি সারে ভেজাল সংক্রানত্ম এমন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। সারের মান নিয়ন্ত্রণে বিশেস্নষণ সংক্রানত্ম এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার আমদানি, উৎপাদন ও বিপণনে সুষ্ঠু তদারকি না থাকার কারণে ভেজাল সার কৃষকদের হাতে পেঁৗছে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ৰতিগ্রসত্ম ও প্রতারিত হচ্ছেন। অন্যদিকে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন।
এ ব্যাপারে জিয়া সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনি জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রতি বসত্মা সারে ওজন কম হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। মিথ্যা রটনা করা হয়েছে। ফ্যাক্টরির বদনাম করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে। ওজনে সঠিক মাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতি ঘণ্টায় দুই বার মেশিনে সার মাপা হয়। কারখানা সূত্র জানায়, প্রতি বসত্মা সারে ওজন কম বেশি হওয়ার ঘটনা ঘটে। সুনামগঞ্জের শালস্না উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাশ জনকণ্ঠকে বলেন, জিয়া সার কারখানা থেকে আসা প্রতি বসত্মা সারে দুই থেকে চার কেজি কম হওয়ার অভিযোগ কৃষকদের। এ নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে বাকবিত-ার ঘটনা ঘটছে। কৃষকদের অভিযোগ অধিক মুনাফা অর্জনে ব্যবসায়ীরা প্রতি বসত্মায় কৌশলে দুই কেজি সার কম দিচ্ছে। এদিকে ওজনে কম হওয়ায় দাম পুষিয়ে নিতে ৰুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সার বিক্রি করছে। ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে কৃষকরা। বসত্মাপ্রতি সার কম হওয়ার কারণে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখি। অভিযোগের সত্যতা মেলে। আমার স্টকে বেশ কয়েক বসত্মা সার আছে এর সবই দুই থেকে চার কেজি কম হবে। সার কারখানা কতর্ৃপৰ যদি বসত্মাপ্রতি সার কম হওয়ার কথা অস্বীকার করে তাহলে আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি। আমার কাছে জিয়া সার কারখানার প্রতি বসত্মায় সার কম হওয়ার প্রমাণ আছে। কতর্ৃপৰ আসলে আমি প্রমাণ দেব। শুধু এক বসত্মা নয় এরকম হাজারো বসত্মা দেখানো যাবে এর সবই সার কম দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানিয়েছেন, উৎপাদনের পর বাষ্প হওয়ার কারণে প্রতি বসত্মায় সার কম হচ্ছে। অবনী মোহন জানান, জিয়া সার কারখানা ছাড়া ফেষ্ণুগঞ্জসহ বিভিন্ন সার কারখানা থেকে আসা সার নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই। কারণ সব বসত্মায় ৫০ কেজি সার পাওয়া যাচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে কতর্ৃপৰের দৃষ্টি কামনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.