চালের মূল্য

বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশে হঠাৎ করে চালের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। খাদ্যমন্ত্রী চালের এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য মিল মালিক ও আড়তদারদের দায়ী করে বলেছেন, শীত ও কুয়াশার অজুহাতে তারা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এখন ফসলের ভরা মৌসুম। ইতোমধ্যে আমন ধান উঠে গেছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের দাম এখন বেশ নিম্নমুখী। কিছু সমস্যা ও জটিলতার কারণে সরকার সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে এ বছর ধান কিনছে না। অথচ সাংসারিক প্রয়োজনে কৃষককে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। আর সেই সুযোগ গ্রহণ করছেন আড়তদার ও মিল মালিকরা। তারা কম দামে কৃষকের নিকট থেকে ধান কিনে সংরক্ষণ করছেন এবং সেই ধান থেকে চাল বানিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু সংখ্যক মিল মালিক আর আড়তদারের হাতে চালের বিরাট মজুদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পিত সিন্ডিকেট ব্যবস্থার কারণেই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির এমন কারসাজি চলছে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী আছেন, যারা ব্যবসায়ে নিজেদের ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানকেই প্রাধান্য দেন। দেশের স্বার্থ বা জনগণের ভোগান্তি তাদের কাছে গৌণ বিষয়। তারা সুযোগের সন্ধানে থাকেন, কখন লাভের মওকা আসে সাধু-অসাধু যে কোন উপায়েই হোক না কেন। নিজেদের অনৈতিক ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের এই কুসংস্কৃতি এদেশে বেশ পুরনো, যা সিন্ডিকেট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। নিকট-অতীতে এই সিন্ডিকেটের বহুমুখী কারসাজি মানুষ দেখেছে। এরা যেন অপ্রতিরোধ্য, বেপরোয়া। চালের বাজারকে সামনে নিয়ে সেই সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং চালের বাজারের অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। বাজারে অন্যান্য অনেক জিনিসের মূল্য মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও চাল নিয়ে যে চালবাজি শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করতে না পারলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে; সরকারের ভাবমূর্তিও তাতে ক্ষুণœ হতে পারে।
বাজারে চালের দাম বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদক পর্যায়ে কৃষকেরা সেই দাম বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না। কারণ বড় পরিসরে ধান মজুদ রেখে চাল বানানো ও বিক্রি করার সামর্থ্য তাদের বেশিরভাগেরই নেই। এমতাবস্থায় ধানই তাদের প্রধান মূলধন। সেচ ও কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। কৃষকেরা ধান চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ছেন। এই প্রেক্ষাপটে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না গেলে কৃষকদের স্বার্থরক্ষা এবং মধ্যস্বত্বভোগী তথা সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলেই মনে হয়। বিগত বছরে দেখা গেছে, সরকার নিজস্ব ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সরাসরি ধান ক্রয় করার কারণে কৃষকরা বেশ উপকৃত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তহবিলের স্বল্পতা এবং সরকারী ক্রয়কেন্দ্রে কৃষকের নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ধান সরবরাহের অভিযোগ থাকলেও বিষয়টিকে ঢেলে সাজিয়ে পুনরায় চালু করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। প্রকৃত কৃষক যাতে সরাসরি কেন্দ্রে এসে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে, সেজন্য স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে তাদের শনাক্তকরণ/পরিচিতি ‘কার্ড’ দেয়া যেতে পারে। এতে কৃষকের ছদ্মাবরণে আরেক ধরনের মধ্যস্বত্বভোগীর চালবাজি নিয়ন্ত্রিত হবে বলে আশা করা যায়। সেই সঙ্গে ধান ক্রয় মৌসুম শুরুর আগেই সরকারকে তহবিলের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়েও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.