যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সাঈদীর পক্ষে যুক্তিতর্ক ফের শুরু ॥ মালুমের বিরুদ্ধে আবেদন নিষ্পত্তি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে পুনরায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরু করেছে আসামিপক্ষ।
অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের অপসারণ চেয়ে আসামিপক্ষের করা দুটি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রবিবার এই আদেশ প্রদান করে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। আজ আবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। এর আগে ১৭ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী সাঈদীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি অভিযোগে সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং একটি অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে প্রসিকিউশনের জবাব দেয়ার থাকলে তা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রসিকিউশন থেকে সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য প্রমাণাদী উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে এটাই প্রার্থনা করেছি।’ এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাঈদীর মামলার রায় যে কোন দিন দেয়া হবে উল্লেখ করে মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে ট্রাইব্যুনাল-১। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইব্যুনালÑ১ এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠন করা হয় এ ট্রাইব্যুনাল। এ পুনর্গঠনের কারণে সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক ফের শুরু হয়। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আইন অনুসারে সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে।
এ মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২৭ সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়। তাদের মধ্যে ২০ জন মামলায় আনীত অভিযোগ বিষয়ে এবং ৭ জন জব্দ তালিকার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষ তাদের জেরা করে। এ ছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার আইও’র কাছে দেয়া ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাঈদীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী হিসেবে ১৭ জন সাক্ষ্য দেয়। প্রসিকিউশন এ সাক্ষীদের জেরা করে।
জেয়াদ আল মালুম

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের অপসারণ চেয়ে আসামিপক্ষের করা দুটি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জেয়াদ আল মালুমের প্রসিকিউটর হিসেবে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত চীফ প্রসিকিউটরের সুবিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়ে আবেদনের নিষ্পত্তি করে।
চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেয়াদ আল মালুম প্রসিকিউটর হিসেবে থাকবেন কি থাকবেন না তা নিষ্পত্তির ভার আমার ওপর দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলে, আইসিটি আইন অনুযায়ী যে কাউকে প্রসিকিউশন টিম থেকে অপসারণের ক্ষমতা চীফ প্রসিকিউটর রাখেন। সে অনুযায়ী চীফ প্রসিকিউটরের সুবিবেচনার ওপরই ছেড়ে দেয়া হলো। গত ১৫ জানুয়ারি আসামিপক্ষের করা আবেদনের শুনানি শেষে আদেশের জন্য ২০ জানুয়ারি দিন ধার্য করে দেয় ট্রাইব্যুনাল।
জেয়াদ আল মালুমকে অপসারণ চেয়ে দাখিল করা দুটি আবেদন একই ধরনের হওয়ায় দুটি আবেদনের এক সঙ্গে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। গোলাম আযমের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন এ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। অন্যদিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্র্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

No comments

Powered by Blogger.