বরিশাল-খুলনা হজের ভেলায় বরিশালের সহজ জয়

তিন দিন আগে ব্যাট করছিলেন পার্থে, বিগ ব্যাশের সেমিফাইনালে। ওয়াকায় বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির উইকেটগুলোর একটিতে শেন ওয়ার্নের মেলবোর্ন স্টারসের হয়ে করেছিলেন ৪৩ বলে ৭০।
কাল ব্র্যাড হজ মিরপুরে। তাঁর নিজের ভাষায়, এখানকার উইকেট ‘বিশ্বের সবচেয়ে মন্থরগুলোর একটি’। পুরো বিপরীত উইকেট তাঁর ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলল সামান্যই। এবার ৪০ বলে ৫৩। শুধু কি আর উইকেট ও কন্ডিশনে পার্থক্য! ম্যাচের আগের রাতেই এসেছেন, টিম হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। কাল দেড়টায় তিনি নামলেন টস করতে। নিজেই জানালেন, জেটল্যাগ কাটেনি। গতবারও এই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু দলটা ‘গতবারের’ শুধু নামেই, দলের চেহারা তো প্রায় নতুন! হজের তাতে কিছু যায়-আসে বলে মনে হলো না। বোলিং-ফিল্ডিং পরিবর্তনসহ উজ্জীবিত নেতৃত্ব দিলেন মাঠে। এরপর ব্যাট হাতে দারুণ এক ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরা। বরিশাল বার্নার্স পেল ৮ উইকেটের সহজ জয়। টানা দুই ম্যাচ হারল খুলনা রয়েল বেঙ্গলস।
দুই দলই কাল নেমেছিল পাঁচজন করে বিদেশি নিয়ে। কিন্তু বিদেশির মানে যেমন পার্থক্য, সেটাই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিয়ছে ম্যাচে। বরিশালের জয়ে পাঁচ বিদেশিরই অবদান আছে। খুলনার রিকি ওয়েসেলস দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করলেও বাকিরা কিছু করতে পারেননি। গড়পড়তা মানের দুই আফগান ক্রিকেটারের পার্থক্য গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে কি না, প্রশ্ন অবশ্য সেটা নিয়েই। বাঁহাতি পেসার শাপুর জাদরান তবু খুব একটা খারাপ করেননি, তবে লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার সামিউল্লাহ শেনওয়ারি দলকে হতাশ করেছেন প্রথম ম্যাচে।
ব্যাট হতে ব্যর্থ লু ভিনসেন্ট পরে জাদরানের বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন হজের। হজ তখন ১৮। ফিল মাস্টার্ডের (২৭ বলে ৩৫) সঙ্গে হজের ওপেনিং জুটিই পরে কার্যত শেষ করে দিয়েছে ম্যাচ। ১৪৩ রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ৫৩ বলে ৭৮। ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো ডেনলি (২৮ বলে ৩০*) ও আজহার মেহমুদ (১৬ বলে ২৫*) বাকি কাজটুকু সেরেছেন অনায়াসে। ফরহাদ রেজকে টানা দুটি চারে ৯ বল আগেই ম্যাচ শেষ করে দেন মেহমুদ। গত বিপিএলের ফাইনালে ৭০ করেছিলেন হজ। এবার শুরু করলেন যেন ওখান থেকেই। জানালেন, আবারও ফাইনালে দেখতে চান দলকে।
ম্যাচের প্রথম বলেই শফিউলের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কটবিহাইন্ড নাজিমউদ্দিন। এরপর সেভাবে আর গতি পায়নি খুলনার ইনিংস। রিকি ওয়েসেলস (৪৪ বলে ৪৮) ছাড়া বলার মতো রান শুধু শাহরিয়ার নাফীসের (২৮ বলে ৪৩)। বড় রানও এসেছে শুধু দুটি ওভারে। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপুর এক ওভারে শাহরিয়ারের চারটি চারের কল্যাণে ১৭। আর কবির আলীর এক ওভারে ওয়েসেলসের দুই ছয় ও এক চারের সুবাদে ১৯। টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট, অস্ট্রেলিয়ার ড্যানিয়েল হ্যারিসের ব্যর্থতায় ৬ উইকেট হাতে নিয়েও শেষ পাঁচ ওভারে এসেছে মাত্র ৩৪!
দলের হারেও অধিনায়ক শাহরিয়ারের বড় একটা স্বস্তি নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। কালকের আগে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সর্বোচ্চ ছিল ৩০, স্ট্রাইক রেট ছিল ৭৯ দশমিক ০৬। কাল ১৫৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটা টি-টোয়েন্টি দলে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আপাতত থামাবে।
আগের ম্যাচে ১৪২ করে ঢাকার (২০৪) ধারেকাছেও যেতে পারেনি খুলনা। কাল আগে ব্যাট করেও আবার ঠিক ১৪২, লড়াই হলো না এবারও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা রয়েল বেঙ্গলস: ২০ ওভারে ১৪২/৮ (নাজিমউদ্দিন ০, শাহরিয়ার ৪৩, হ্যারিস ১১, ওয়েসেলস ৪৮, ভিনসেন্ট ৫, শেনওয়ারি ৩, ফরহাদ ১১, ডলার ৭*, সানজামুল ৩, জাদরান ০*, শফিউল ১/১৩, মেহমুদ ১/৩৩, নাজমুল ০/২৮, কবির ১/৩০, সানি ১/১৯, অলক ১/১৮); বরিশাল বার্নার্স: ১৮.৩ ওভারে ১৪৬/২ (মাস্টার্ড ৩৫, হজ ৫৩, ডেনলি ৩০*, মেহমুদ ২৫*, ফরহাদ ০/২৫, জাদরান ০/২৫, নাবিল ০/১৮, সানজামুল ১/৩৯, শেনওয়ারি ০/১৫, ডলার ১/২২)
ফল: বরিশাল বার্নার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ব্র্যাড হজ।

No comments

Powered by Blogger.