মঙ্গলবার থেকে কার্যকর- বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বেড়েছে

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে কিলোমিটারপ্রতি নতুন ভাড়া হবে এক টাকা ৪৫ পয়সা।
আগামী মঙ্গলবার সকাল থেকে নতুন ভাড়ার হার কার্যকর হবে। এর আগে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছরের ১ জানুয়ারি দূরপাল্লার বাসের ভাড়া এক টাকা ৩৫ পয়সা নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর ও দুই মহানগরের আশপাশের এলাকায় চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে না। কারণ, এ দুই মহানগরে ডিজেলচালিত বাস চলাচল নিষিদ্ধ। এসব শহরে সিএনজিচালিত বাস চলাচল করে।
গতকাল রোববার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে বাসের ভাড়া নির্ধারণ-সংক্রান্ত বৈঠক শেষে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নতুন ভাড়ার হার ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মন্ত্রী মঙ্গলবারের আগে যাত্রীদের কাছ থেকে যাতে বাড়তি ভাড়া আদায় না করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বাসমালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত বাস মালিক সমিতির নেতারা বর্ধিত ভাড়া হার মেনে নেন এবং সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকরের বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
যদিও দুদিন আগে থেকেই দূরপাল্লার বাসগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় করা শুরু করে দিয়েছেন এই মালিকেরা। কোম্পানি ও দূরত্বভেদে বাসের ভাড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে তা আদায় করা হচ্ছে। এমনকি সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈঠকে বলেন, ‘আমরা রাজনীতিবিদেরাও সবাই এক রকম নই। সবাই ভালো হলে দেশটা অনেক আগেই সোনার বাংলা হয়ে যেত। আপনাদেরও অনেকে (বাসমালিকেরা) গলা কাটা ভাড়া নেন। ঘোষণার আগে বাড়তি টাকা আদায় করেন। এখন আপনারা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাবেন বলে আশা করি।’ মন্ত্রী জানান, বিআরটিসির বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়ে তিনি তা বন্ধ করেছেন।
গত মঙ্গলবারও ভাড়া নির্ধারণে একটি বৈঠক হয়েছিল। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও বাস পরিচালনায় আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি আমলে নিয়ে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ২৩ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। কমিটির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী ও সচিব। সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে না পেরে তখন প্রস্তাবটি আবার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশ্লেষণ কমিটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু কমিটি গতকাল আগের প্রস্তাবটিই বৈঠকে তুলে ধরে। অভিযোগ আছে, এ কমিটি সব সময় মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে আসছে।
মালিক সমিতির নেতাদের উপস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায় পড়েছি। ভাড়া বৃদ্ধির দায় এড়াতে পারব না। এতে যাত্রীদের ওপর চাপ পড়বে। তাই যাত্রী স্বার্থ রক্ষা করে এবং মালিকদের স্বার্থও যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সব বিবেচনা করেই এই ভাড়া (কিলোমিটারে ১০ পয়সা) ঠিক করা হয়েছে।’
তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ বর্ধিত ভাড়া হার প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ বেলা ১১টায় তারা প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা ডেকেছে।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ ভাড়ার হার মেনে নিলেও যানবাহনের ফি ও করের জরিমানা মওকুফ করার দাবি জানান। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ডিজেলচালিত বাস চলাচল করতে পারবে না—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নেওয়া এমন আদেশ বাতিল এবং ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জরিমানা মওকুফে অর্থমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া আদেশ বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাওয়া হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক, বিআরটিএর চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান, শ্যামলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী রমেশ চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.