নারীর প্রতি সহিংসতা- প্রতিরোধে জেগে উঠুক সামাজিক শক্তি
অগি্নকণা অগি্নমশাল হয়ে উঠুক_ এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তরুণদের এক সমাবেশে জ্বলে উঠেছিল শত শত মোমবাতি। তাদের সংকল্প, ধর্ষণ ও নির্যাতন থেকে সমাজকে রক্ষা করতেই হবে।
এই সংকল্পের দিনেই সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম_ '২০১২ সালে ৮০৫ নারী ও শিশু ধর্ষণ'। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭০ জনকে। যৌতুকের শিকার ৮২২ জন। যৌতুকজনিত কারণে খুন হয়েছেন আরও ২৭৩ জন। এসব উদ্বেগজনক খবরের মধ্যেই নতুন বছরের ১৩ জানুয়ারি গত রোববার রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে খুন হয়েছে ৫ বছর বয়সের একটি শিশু। গত বছরের জুন মাসে এই শিশুটিকেই ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল রইচ শেখ নামের এক তরুণ। মামলায় জামিন পাওয়ার কয়েকদিন পরেই এই পাষণ্ড প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে খুন করে নিষ্পাপ শিশুটিকে। রাজবাড়ী সদর থানার ওসির ধারণা, শ্বাসরোধ করে হত্যার আগে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলা সদরে ধর্ষিত হয়েছে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী। সদর হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার বাবা বাকপ্রতিবন্ধী। দিনমজুর খেটে সংসার চালান তিনি। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজ যদি তার পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে এ নিষ্ঠুর অমানবিকতার বিচারের নিশ্চয়তা কোথায়? রাজবাড়ীর শিশুটির ধর্ষক ও ঘাতকের শাস্তির জন্যও তো চাই একই ধরনের নিশ্চয়তা। নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে দিকে দিকে। শহর ও গ্রাম সর্বত্র ধর্ষণ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করা হচ্ছে। কেবল নারী সংগঠন নয়, সর্বস্তরের মানুষ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবীদের সংগঠনগুলো নারীর প্রতি সহিংসতায় প্রতিবাদী। সংবাদপত্র এবং বেতার-টেলিভিশন এ বিষয়ে জনমত গঠনে সদা সক্রিয়। এ ইস্যুতে সরকারের ঘোষিত অঙ্গীকারেও কোনো ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু কেন এ অভিশাপ থেকে নিস্তার মিলছে না, সে প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়ায় আমাদের সবাইকে। আইন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইন যথেষ্ট কঠোর। সোমবার রাজধানীর দুই গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণ ও একজনকে হত্যার দায়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এর বিচারক দু'জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আরও নজির রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন যারা করছে, তাদের কাছে আদালতের কঠোর মনোভাবের বার্তা পৌঁছায় না_ সেটা বলা চলে না। তারপরও প্রতিদিন দেশের অনেক স্থানে নির্যাতিত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। এ জন্য দায়ী সবাইকেই দ্রুত চিহ্নিত ও বিচার করে শাস্তি প্রদান করা হয়, সেটা বলা যাবে না। এটাই কি অপরাধীদের বেপরোয়া করে তোলে? প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। রাজনীতিবিদ এবং সামাজিক শক্তির জন্যও এ পরিস্থিতি একটি বার্তাই দেয়_ অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করার জন্য জেগে উঠতে হবে। কোনো অপরাধ ঘটলে তার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি অবশ্যই তারা তুলবেন; কিন্তু একই সঙ্গে সোচ্চার হতে হবে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনতে। ধর্ষণ ও এ ধরনের সহিংসতার খবর আমরা দেখতে চাই না, বিচারের জন্য অসহায় মানুষের আর্তিও আর শুনতে চাই না।
No comments