সুন্দরবনে বনদস্যুদের হামলা

মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার ও দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমদ গত শুক্রবার দুপুরে সুন্দরবনে বনদস্যুদের গুলিতে আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, তিনি মংলা থেকে তাঁর স্টাফদের নিয়ে কার্গোযোগে দুবলার চরে যাওয়ার সময় সুন্দরবনের চরাপুটিয়ায় বনদস্যুর কবলে পড়েন। বনদস্যুরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর দেহরক্ষীদের সঙ্গে বনদস্যুদের গুলিবিনিময়কালে কমপক্ষে তিন বনদস্যু নিহত হয়। গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের অন্যতম সেরা ‘নোনাবন’ বলে খ্যাত সুন্দরবন বনদস্যু, জলদস্যু ও নানা ধরনের অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বনদস্যুরা নানা গ্রুপে বিভক্ত। এদের অত্যাচারে সুন্দরবনের বাওয়ালী-মৌয়ালীসহ লাখ লাখ জেলের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব সমজীবী মানুষের জীবিকা সম্পূর্ণভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সুন্দরবনে সহিংসতা ও অপরাধ এত বেড়েছে যে, এরা অনেকেই সেখানে যেতে ভয় পায়। মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন সুন্দরবনে বনদস্যু ও জলদস্যুদের অত্যাচার ও লুটপাটের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। সম্ভবত সে কারণেই বনদস্যুরা তাঁকে হত্যার টার্গেট করেছিল। সুন্দরবনের দস্যুদের বিষয়ে ইতোপূর্বে বহুবার সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক ও সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়নি। অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
আমাদের অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ‘সুন্দরবন’ বহু আগে থেকে নানা ধরনের অপরাধীর আস্তানায় পরিণত হয়েছে। জলদস্যু ও বনদস্যুরা কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ লুট করছে। লাখ লাখ বনজীবী বাওয়ালী, মৌয়ালী ও জেলেরা এদের হাতে জিম্মি। জানা গেছে, জঙ্গী বনদস্যুরা প্রতিবছর জেলে ও বনজীবীদের কাছ থেকে প্রায় দু’শ’ কোটি টাকা চাঁদা ও মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করে থাকে। এরা গত দু’বছর প্রায় অর্ধশত জেলে ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, বনদস্যু ও জলদস্যুদের এসব গ্রুপ এত শক্তিশালী হলো কিভাবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে এদের যোগসাজশ রয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আছে কোটি কোটি টাকা।
জলদস্যুরা ইলিশের মৌসুমে প্রায়ই জেলেদের নৌকা লুট করে। বনদস্যুদের একটি গ্রুপকে দমন করা হলে অন্য গ্রুপটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিছুদিন আগে সুন্দরবনে র‌্যাবের পরিচালিত এক অভিযানে কুখ্যাত ‘জিহাদ গ্রুপের’ পাঁচ বনদস্যু নিহত হয়। এরপর শুরু হয় ‘মর্তুজা বাহিনীর’ উপদ্রব। অনেকের ধারণা, মর্তুজা বাহিনীর হামলায় মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহত হয়েছেন। এভাবে আর কতকাল সুন্দরবন অপরাধীদের ‘স্বর্গ’ হিসেবে বিরাজ করবে?
সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে আরও বড় ধরনের পরিকল্পিত অভিযান দরকার। তা না হলে নিরন্তর লুটপাটের কারণে সুন্দরবন একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা কেউই সেখানে ভ্রমণে যেতে সাহসী হবেন না। সুন্দরবনকে সকল বনদস্যু ও জলদস্যুর কবল থেকে রক্ষা করা হোকÑএটাই সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.