পদ্মা সেতু ॥ দুদকের মামলায় বিশ্বব্যাংক ॥ প্যানেল সন্তুষ্ট- ০ সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার চুপ্পু- ০ তদন্ত পর্যবেক্ষণে ফের আসার আগ্রহ- ০ অভিযুক্ত কাউকেই তদন্তের বাইরে রাখা হবে না

 পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রাকযাচাইয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সম্প্রতি সংস্থাটিকে পাঠানো এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় এ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তারা।
একই সঙ্গে অনুসন্ধানের মতো তদন্ত কাজ পর্যবেক্ষণ করতে প্যানেল সদস্যরা আবারও বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সোমবার দুদক কমিশনার মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। চুপ্পু বলেন, মামলা দায়েরের পর বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে মামলার অভিযোগপত্র প্রেরণ করার পর ২/৩ দিন আগে তাদের প্রতিক্রিয়া লিখিত আকারে প্রেরণ করে। প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্যানেল তদন্ত কাজে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। বিশেষ করে টেকনিক্যাল কোন কাজে তদন্ত করতে যদি দুদক সমস্যা মনে করে তার প্রেক্ষিতে যদি তদন্ত কর্মকর্তারা সহযোগিতা চান সে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছেন তাঁরা। দুদক কমিশনার বলেন, তারা দুদকের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এতে হতাশার কিছু নেই। চুপ্পু বলেন, এর মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে দুদকের যোগাযোগ আছে এবং তাঁদের কাজে বিশ্বব্যাংকের প্যানেল সন্তুষ্ট। এছাড়া বিশেষজ্ঞ প্যানেল দুদককে দেশের আইন অনুযায়ী মামলার তদন্ত কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করার বিষয়েও তাগিদ দেন।
মামলার তদন্ত কাজের অগ্রগতির বিষয়ে চুপ্পু বলেন, মামলাপরবর্তী সময়ে দুদকের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন দুদক প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসবে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী এবং পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামকে তদন্তের আওতায় আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের কাউকে তদন্তের বাইরে রাখা হবে না। তিনি বলেন, তদন্তে বিস্তৃতভাবে কাজ করার সুযোগ আছে। তাই তদন্ত টিম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্যানেল আসার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন কথা হয়নি। তবে তারা আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কানাডা থেকে রমেশের ডায়েরি পাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গেও দুদকের যোগাযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে প্যানেলের সহযোগিতা চাওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এখনও সে সময় আসেনি। আগে নিজেরা চেষ্টা করি। মামলার আসামি কানাডিয়ান তিন নাগরিকের গ্রেফতারের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ দুদক নেয়নি বলে জানান সংস্থাটির কমিশনার। তবে কমিশন আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক যাচাই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় আসামি করা হয় সাতজনকে। তাঁরা হলেন- যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা, সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের ও এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ মোস্তফা। এছাড়া তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে রাখা হয় সন্দেহভাজন আসামির তালিকায়। আসামিদের মধ্যে ইতোমধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌসকে গ্রেফতার করেছে দুদক। তাঁরা কারাগারে রয়েছেন। মামলার পর বিশ্বব্যাংক একটি বিবৃতি প্রদান করে। ওই বিবৃতিতে তারা বলেছিল বিশেষজ্ঞ প্যানেল রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের আলোকে বিশ্বব্যাংক তাদের পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.