অধ্যাপক ইউনূসের অব্যাহতি-সমঝোতামূলক ফয়সালা এখনও সম্ভব

শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তারই প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অব্যাহতি প্রদানের ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংককে তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তার এ স্বপ্ন দেশের গণ্ডিও অতিক্রম করেছে। কয়েকটি দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ব্যাংকিং সেবা। তাকে ব্যাংকিং কোম্পানি আইন অনুযায়ী 'বয়সসীমা অনেক বছর আগেই অতিক্রান্ত হওয়ার' যুক্তিতে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা তাই স্বাভাবিকভাবে কেউই গ্রহণ করছে না। এমনকি ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য ও সম্ভাবনা নিয়ে যারা বিতর্ক করেন তারাও মনে করেন যে, দেশের জন্য অনন্য সম্মান বয়ে এনেছেন যে ব্যক্তি তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া সম্মানজনক ছিল না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও স্বীকার করেছেন, এ পদক্ষেপে দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে না। অধ্যাপক ইউনূস তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া অসম্মানজনক মনে করেছেন। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তাকে সম্মানের সঙ্গে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি তা রাখেননি। কেন এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলো না এবং এ জন্য কার কতটা দায়, আমরা সে বিতর্কে যাব না। তবে দেশের সুনাম ও মর্যাদা রক্ষার দায় সবারই এবং এ জন্য তাদের সচেষ্ট থাকার অনুরোধ জানাব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং সেখান থেকেই আইনি সিদ্ধান্ত আসবে। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতি লাখ লাখ সদস্য ও ঋণগ্রহীতার আস্থা বজায় রাখা। এ জন্য বিশেষভাবে সচেষ্ট থাকতে হবে সরকারকে। অধ্যাপক ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা অনুসরণ করেই দেশে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি প্রসার লাভ করেছে। দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত এবং এর সঙ্গে মূলত জড়িত সচ্ছল জনগোষ্ঠী। হতদরিদ্র লাখ লাখ নারী-পুল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা সময়মতো ফেরত দেয়, এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনিই। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে গেলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপরও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে এবং তাতে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপের সঙ্গে সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই। তার এ বক্তব্য যথার্থ হিসেবে মেনে নিয়েও বলতে হয় যে, এর রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা এ পদক্ষেপে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সেটাও সরকারকে বিবেচনায় রাখা চাই। বিষয়টিকে অনেকেই হয়তো সার্বভৌম একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করতে চাইবেন। দৃষ্টিকটু রকমের বাড়াবাড়ির প্রসঙ্গও আসতে পারে। আইন সবার জন্য সমান_ এমন যুক্তিও জোরালো। কিন্তু কূটনীতিকদের কারও কারও প্রতিক্রিয়ায় যে উষ্মা যথেষ্ট সেটা ভুলে গেলে চলবে না। সরকার বিষয়টি কীভাবে ফয়সালা করে তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। দেশবাসীও বিষয়টির সমঝোতামূলক ফয়সালা আশা করে। এ জন্য সব পক্ষই নমনীয়তা দেখাবে, এটা প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.