রিয়ার এ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব নতুন নৌবাহিনী প্রধান

রিয়ার এ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব, এনডিসি, পিএসসি, বিএন-কে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি হতে তিনি নৌবাহিনীপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং একই দিনে তাঁকে ভাইস এ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে বলে রবিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
নবনিযুক্ত নৌপ্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ, (এনডি), এনডিসি, পিএসসি, বিএন এর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। উল্লেখ্য, ভাইস এ্যাডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ আগামী ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখ অপরাহ্ন হতে স্বাভাবিক অবসরে যাবেন।
রিয়ার এ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরহুম মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন উপসচিবের কনিষ্ঠ পুত্র। রিয়ার এ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব ৮ জুলাই ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রিটানিয়া রয়েল নেভাল কলেজ, ডার্টমাউথ হতে মিডশিপম্যান হিসেবে বেসিক নেভাল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ (প্রবীণতাসহ ২৬ মে ১৯৭৮) সালে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এক্সিকিউটিভ শাখায় কমিশন লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৩ সালে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ধানমন্ডি, ঢাকা হতে বিজ্ঞান শাখায় স্টার মার্কসহ এসএসসি পাস করেন এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় দশম স্থ’ান অধিকার করেন। অতঃপর তিনি ঢাকা কলেজ হতে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণীতে মাস্টারস ইন ডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস) ডিগ্রী লাভ করেন।
রিয়ার এ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব দেশে বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং সকল গ্রেডেড কোর্সে প্রথম শ্রেণী প্রাপ্ত হন। বিভিন্ন কোর্সের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান হতে নেভিগেশন ও ডাইরেকশন স্পেশালাইজেশন কোর্স, চীন হতে মিসাইল কোর্স ও মাইন সুইপিং কোর্স, ঢাকার মিরপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউপোর্ট, রোড আইল্যান্ড হতে কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কোর্স, যুক্তরাজ্য হতে জয়েন্ট ওয়ারফেয়ার কোর্স ও সী সেফটি কোর্স, মিরপুর এনডিসি হতে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও ক্যাপস্টোন কোর্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই হতে ফ্ল্যাগ অফিসার্স কম্বাইন্ড ফোর্স মেরিটাইম কম্পোনেন্ট কমান্ডার কোর্স সম্পন্ন করেন। Ñআইএসপিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য চাকরিকালে তিনি ছোটবড় বিভিন্ন জাহাজে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। যার মধ্যে রয়েছে ৩টি ফ্রিগেট, লার্জ পেট্রোল ক্রাফ্ট, মাইন সুইপার ও মিসাইল বোট। একজন সফল নেভিগেটর হিসেবে তিনি বিভিন্ন দেশে যথা যুক্তরাজ্য, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানে বিভিন্ন জাহাজ সফলতার সঙ্গে নেভিগেট করেছেন। তিনি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীর কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ, মিরপুর, ঢাকায় ডাইরেক্টিং স্টাফ (ইন্সট্রাক্টর) এবং কর্নেল জেনারেল স্টাফ (কর্নেল জিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রিয়ার এ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চতর কমান্ড পজিশন (এরিয়া কমান্ডার)-এর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তার মধ্যে কমোডর কমান্ডিং বিএন ফ্লোটিলা (কমব্যাট), কমোডর কমান্ডিং খুলনা (কমখুল) এবং নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি নৌসদর দফতরে সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশন্স, পরিচালক নৌ পরিকল্পনা, পরিচালক নৌ সঙ্কেত, পরিচালক নৌঅস্ত্র, পরিদর্শন ও সরবরাহ, নৌসচিব এবং জাজ্ এ্যাডভোকেট জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কোস্টগার্ডে পরিচালক পরিকল্পনা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নৌসদর দফতরে ১ জুলাই ২০০৯ হতে সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশন্স) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে রিয়ার এ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। বর্তমান দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি স্কাউটসের কমিশনার এবং বাংলাদেশ স্কাউটস্-এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান কর্তৃক তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এওয়ার্ড ‘রৌপ্য ইলিশ’ প্রাপ্ত হন। তিনি নৌবাহিনীতে অসাধারণ কৃতিত্ব এবং পেশাগত দক্ষতার জন্য নৌবাহিনী প্রধান হতে প্রশংসাপত্র প্রাপ্ত হন।
পারিবারিক জীবনে রিয়ার এ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব ও স্ত্রী হাফিজা হাবিবের একজন পুত্র ও একজন কন্যাসন্তান রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.