অন্য রকম ২০১২

নানা চমকপ্রদ ঘটনায় ঠাসা একটি বছর শেষ হচ্ছে। ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদ কিংবা মালালার মৃত্যুঞ্জয়ী লড়াইয়ের মতো বড় ঘটনাগুলো নিয়ে শোরগোলের শেষ নেই। এসব ‘গ্র্যান্ড ইভেন্টে’র আড়ালে বছরজুড়ে ঘটেছে বিস্ময়কর উদ্ভাবন উদ্ঘাটন। এ রকম কয়েকটি বিষয় নিয়ে আজকের আয়োজন।
হারিয়ে যাওয়া ‘মায়ান মন্দির’
এ বছরের উল্লেখযোগ্য একটি আবিষ্কার হচ্ছে মায়ানদের তৈরি করা সূর্যদেবতার মন্দির। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টিফেন হাউসটন গুয়াতেমালার জঙ্গলে মন্দিরটির সন্ধান পান। একে বলা হচ্ছে ‘টেম্পল অব নাইট সান’। গুয়াতেমালার গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া এই মন্দির এককালে অনেক দূর থেকেও চোখে পড়ত। মন্দিরের ওপরে ছিল সূর্যদেবতার রক্তিম এক ভয়ংকর ও ঢাউস প্রতিকৃতি। শক্তির উৎস হিসেবে মায়ানরা এই দেবতার পূজা করত।
গুয়াতেমালাকে মায়া সভ্যতার কেন্দ্রস্থল বলে ধরা হয়। মায়া সভ্যতা একদা গুয়াতেমালার পাশের বেলিজ, পশ্চিম হন্ডুরাস, এল সালভাদর, ও দক্ষিণ মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সালে এ সভ্যতার শুরু বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা।

ছদ্মবেশী সিংহ
এ ছাড়া বতসোয়ানার মমবো এলাকায় এ বছর একধরনের সিংহের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো ‘ছদ্মবেশ’ নিতে পারে। এগুলো মূলত পুরুষসিংহ হলেও তাদের রাজকীয় কেশর বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে প্রতিপক্ষ বা যেকোনো শিকারকে ভড়কে দিতে পারে। অর্থাৎ পুরুষসিংহ হয়েও এরা বিপরীত লিঙ্গের বেশ ধারণ করতে সক্ষম।

‘দানবীয়’ চোখ
অক্টোবর মাসে ফ্লোরিডার সমুদ্র উপকূলে অদ্ভুতদর্শন একটি চোখের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। তাঁদের অভিমত, এই অদ্ভুত চোখটি বিশাল কোনো দৈত্য বা জলদানবের নয়। এটি সোর্ডফিশ বা করাত মাছের চোখ।

ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ
একটি ধাতব মুদ্রার ওপর অনায়াসে ধরে যাবে এ রকম একটি ক্ষুদ্র ব্যাঙের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। ‘পেডোফ্রিন অ্যামাউয়েনসিস’ নামের এই ছোট্ট ব্যাঙের গলার জোর সাধারণ পোকার চেয়েও কম। পাপুয়া নিউগিনির বৃষ্টিপ্রধান জঙ্গলে এই পুঁচকে ব্যাঙ আবিষ্কারের দাবি করেছেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী। তাঁদের মতে, এটাই বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ। এই ব্যাঙটির সন্ধান পাওয়ার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ব্যাঙটি ছিল ব্রাজিলের ‘গোল্ড ফ্রগ’। দৈর্ঘ্যে এক সেন্টিমিটারের কম।
নতুন ক্ষুদ্রতম ব্যাঙটির দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র মেরুদণ্ডী প্রাণী। এ যাবৎ বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মেরদণ্ডী প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার একধরনের মাছ। এই মাছ ‘প্যাডোসাইপ্রিস প্রোজেনেটিকা’ বলে পরিচিত। এর দৈর্ঘ্য ৮ মিলিমিটার।

দুমুখো বিড়াল
গবেষকেরা আগস্ট মাসে ‘ভেনাস’ নামে দুমুখো একটি বিড়ালের খোঁজ পেয়েছিলেন। তিন বছর বয়সী ভেনাস সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। বিড়ালটির মুখের একদিকে নীল চোখ ও কালো রং এবং অন্যদিকে নীল চোখ ও কমলা রং। গবেষকেরা বিড়ালটির এ রকম মুখের গঠনকে জিনগত দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন।

মস্তিষ্কহীন এককোষী প্রাণী
গবেষকেরা চলতি বছরের অক্টোবর মাসে জীবিত একটি ‘স্লাইম মোল্ড’ প্রজাতির এককোষী প্রাণী আবিষ্কার করেছেন। এ জাতীয় স্লাইম মোল্ডের মস্তিষ্ক নেই, তবে এরা তথ্য ধারণ করে রাখতে পারে।

অদ্ভুত সাদা তিমি
রাশিয়ার গবেষকেরা এপ্রিল মাসে একটি ২২ ফুট লম্বা সাদা তিমির সন্ধান পান। হাঙর গোত্রের এই তিমিটির তাঁরা নাম দিয়েছেন আইসবার্গ। বিশ্বের প্রথম পূর্ণবয়স্ক পুরুষ সাদা ওরকা বা হত্যাকারী তিমি এটা। পূর্ব রাশিয়ার ‘কামচাটকা’ সমুদ্র উপকূলে এই সাদা তিমি দেখা গেছে। সাদা তিমি কালেভদ্রে দেখা যায়। ১৯৭২ সালে কানাডার এক অ্যাকুয়ারিয়ামে অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি সাদা তিমি মারা যায়। এর পর থেকে সাদা তিমি আর দেখা যায়নি।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন অবলম্বনে মিন্টু হোসেন

No comments

Powered by Blogger.