স্মরণ by ডা. জোহরা বেগম কাজী

তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন- 'কর্মেই জীবনের সার্থকতা।' আজীবন নিয়োজিত ছিলেন মানুষের সেবায়। নিজেকেও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানুষ হিসেবে। তিনিই সাংগঠনিকভাবে নারীদের চিকিৎসকের কাছে আসার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন।


মেয়েদের অকালমৃত্যু রোধ করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ খোলা হয় তাঁরই প্রচেষ্টায়। তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক। ডা. জোহরা বেগম কাজী। আজ ৭ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে তাঁর মৃত্যু হয়।
ডা. জোহরা বেগম কাজী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্ম নেন। পারিবারিকভাবে তাঁরা ছিলেন বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনির গোপালপুরের বাসিন্দা। বাবা ডা. কাজী আবদুস সাত্তার। মা মোসাম্মাদ আঞ্জুমান নেসা। মা ছিলেন রায়পুর পৌরসভার প্রথম নারী কমিশনার। বাবা পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় তিনি বাবার সঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছেন। অসহায় মানুষের যন্ত্রণা দেখেছেন খুব কাছ থেকে। সে সময় একজন মেয়ে চিকিৎসক হবে- এ কথা কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল। কারণ তখন মেয়েদের স্কুলে পাঠানোই ছিল পাপের। কিন্তু জোহরা কাজীর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। হলেনও তাই।
তিনি ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী। জীবনে কখনো দ্বিতীয় হননি। ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম আলিগড়িয়ান নারী হিসেবে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন দিলি্লর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত লেডি হার্ডিং মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেনে। এখান থেকে ১৯৩১ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৩৫ সালে এখান থেকেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমবিবিএস পাস করেন। এ জন্য তাঁকে সম্মানজনক ভাইসরয় ডিগ্রি দেওয়া হয়। ইংল্যান্ড থেকে অনারারি এমআরসিইওজি তিনিই পান। এ ছাড়া তঘমা-ই-পাকিস্তান খেতাবেও তাঁকে ভূষিত করা হয়।
ভারতের এয়োথমাল উইমেনস পাবলিক হাসপাতালে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। এরপর যোগ দেন বিলাসপুর সরকারি হাসপাতালে। মহাত্মা গান্ধীর সেবাগ্রামে অবৈতনিকভাবে কাজ করেন জোহরা কাজী। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের প্রধান ও অনারারি প্রফেসর হিসেবে। এখানে কাজ করা অবস্থায়ই অবসরে অনারারি কর্নেলের দায়িত্ব পালন করেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.