যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন- সমানে সমান লড়াই হলে ফল প্রকাশে বিলম্ব হতে পারে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এবার নাটকীয়তা দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া গেলেও চূড়ান্ত বিজয়ী কে হচ্ছেন, তা জানতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বিলম্ব হতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন।


ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ইয়ংসটাউন স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান পল স্রাসিক বলেন, চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য এবারও আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হোয়াইট হাউসের কর্তৃত্ব পেতে হলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং তাঁর প্রতিপক্ষ মিট রমনির মধ্যে যেকোনো একজনকে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ৫৩৮টি ভোটের অন্তত ২৭০টি অবশ্যই অর্জন করতে হবে। তবে প্রত্যেকে যদি ২৬৯টি করে ভোট পান, তা হলে ফলাফল নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তখন বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সংবিধানের একটি জটিল ধারা অনুসরণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফলাফল অভাবনীয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যেমন: ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে মিট রমনি তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও সংবিধান অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেনকেই বহাল রাখতে হবে। আবার হয়তো দেখা যাবে জনগণের ভোটে রমনি নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রইলেন ওবামা।
জনগণের ভোট বেশি পাওয়া সত্ত্বেও ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যাওয়ার ঘটনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরল নয়। ২০০০ সালের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জনগণের ভোটে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী আল গোর। কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তিনি অল্প ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। তবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের প্রয়োজন হয়েছিল। এবারের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, ওহাইওতে এবার যেসব ভোট পড়বে, সেগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগে গণনা করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে বারাক ওবামা কিছুটা সুবিধা পাবেন বলেই সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলো থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওবামা এগিয়ে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তাঁর ব্যবধান খুব বেশি নয়। তা ছাড়া জনমত জরিপের ফলাফল সব সময় সঠিক হবে, এ রকম ধরে নেওয়াটাও যুক্তিসংগত নয়। যেকোনো একটি অঙ্গরাজ্যে যদি কোনো প্রার্থীর ফলাফল অমীমাংসিত থাকে, তবে সেটা ওহাইও হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে, ওহাইওর সরকারি সূত্র জানায়, অন্তত ১৩ লাখ ভোটার ভোটকেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকবেন। তাঁদের কাছে ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ব্যালট পেপার এখনো ফেরত আসেনি।
আরভিন শহরে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ রিক হ্যাসেন বলেন, ভোট গ্রহণের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব না হলে সেই ফলাফল পেতে অন্তত কয়েক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। তখন প্রতিটি ব্যালট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গণনার প্রয়োজন হবে। এএফপি, সিএনএন ও স্লেট।

No comments

Powered by Blogger.