দক্ষতার মান বাড়াতে প্রশিক্ষণ by জাহিদ হাসান

দেশে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীই মাধ্যমিক পেরোনোর আগেই ঝরে পড়ে।জীবন ও জীবিকার তাগিদে তাদের অধিংকাংশই কোনো না কোনো কাজে যোগ দেয়।


কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় তাদের কম বেতনে কাজ শুরু করতে হয়। পরবর্তী সময়ে কাজের অভিজ্ঞতা হলেও স্বীকৃত প্রশিক্ষণ সনদের অভাবে তারা অন্যত্র উপযুক্ত বেতন-ভাতা, পদ-পদবি ও অন্যান্য সুবিধাসহ কাজ পায় না। আবার বর্তমান প্রতিষ্ঠানেও অনেক সময় এসব কর্মীর দক্ষতার মান যথাযথভাবে যাচাই বা মূল্যায়ন হয় না।এতে তাদের কর্মজীবনে বঞ্চনার গল্পই দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
আশার কথা হলো, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি) এসব সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও কর্মীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলছে।পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের কর্মীদের দক্ষতার মান যাচাইয়ের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ধাপে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও সনদ অর্জনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বিটিইবি জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতাকাঠামো বা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কের (এনটিভিকিউএফ) আওতায় এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

এনটিভিকিউএফ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এ প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রশিক্ষণের কারিকুলাম সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিল রেখে। প্রতিটি বিষয়ে ছয়টি ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে আবেদনপত্র বিতরণ ও জমা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ।

প্রশিক্ষণ হবে যেভাবে
বিটিইবি-এর উপপরির্দশক এস এম শাহজাহান জানান, এই প্রতিষ্ঠানে ওয়েল্ডিং, ফিটিং ও ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স—এই তিনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ের প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণ ৩৬০ ঘণ্টা মেয়াদি। বাকি প্রতিটি ধাপে মোট ২৭০ ঘণ্টা করে প্রশিক্ষণ ও ২১৬ ঘণ্টা মেয়াদি ইন্টার্নশিপ করতে হবে। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রতিটি ধাপেই আলাদা করে সনদ পাবেন। একটিতে উত্তীর্ণ হলে পরেরটিতে—এভাবে ছয়টি ধাপে পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা যেকোনো একটি ধাপ শেষ করেও কাজে যোগ দিতে পারেন। বিটিইবির তিনটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিটি বিষয়ে ২০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।

আবেদনের নিয়মাবলি
নারী-পুরুষ উভয়ের আবেদনের সুযোগ আছে। আবেদনপত্র নির্ধারিত প্রশিক্ষণকেন্দ্র বা বিটিইবির www.bteb.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রার্থীকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাস বা পেশায় প্রি-ভোকেশনাল-২ সনদ বা এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসহ ভাষা, গণিত ও ভোকেশনাল দক্ষতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বয়স ন্যূনতম ১৬ বছর হতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে দুই কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি দিতে হবে।

বাছাই প্রক্রিয়া
উপপরির্দশক আরও জানান, প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে।লিখিত পরীক্ষায় বাংলায়-১০, ইংরেজিতে-১০, গণিতে-১০ ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ১০ নম্বর রয়েছে। ২০ নম্বরের মৌখিক ও ব্যবহারিকে ৪০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ ফি বাবদ ওয়েল্ডিং ট্রেড বা বিষয়ের জন্য ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, ফিটিংয়ে ১৬ হাজার এবং ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্সে ১০ হাজার টাকা এককালীন জমা দিতে হবে।

প্রশিক্ষণ দেবেন যাঁরা
এই প্রশিক্ষণ পরিচালনাকারী সংস্থা আইএলওর বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা হরিপদ দাস জানান, বিটিইবিতে যাঁরা প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন, তাঁদের দেশে-বিদেশ বিশ্বমানের প্রশিক্ষণদিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

তিনটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র
বিটিইবির যে তিনটি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে: বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, সিঅ্যান্ডবি রোড, বরিশাল। মুঠোফোন-০১৫৫২৪৯৬১৯১। কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম। ফোন-০৩১-৬৮২০৮২। ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম। ফোন-০৩১-৯৮৯৯২৮৯।

কাজের পরিধি
এস এম শাহজাহান জানান, দেশে-বিদেশ এ ধরনের জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারিগরি দক্ষতার অভাবে প্রবাসে অনেকেই নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। সেজন্য এনটিভিকিউএফের আওতায় কোনো প্রশিক্ষণ সনদ থাকলে তাতে দেশে ও বিদেশে উভয় শ্রমবাজারে ভালো বেতনে কাজ পাওয়া ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.