মেধাবী মুখ- স্বাপ্নিক শাহমান by মারুফ ইসলাম

স্কুলজীবন শেষ, কলেজজীবনের শুরু। এখান থেকেই শাহমান শাহরিয়ার শুরু করেন তাঁর জীবনের গল্প; একজন মেধাবী মুখ হয়ে ওঠার গল্প। ‘তখন আমি ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।


পড়ালেখার পাশাপাশি শুরু করি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি।’ আমরা নড়েচড়ে বসি, আরও খানিকটা মনোযোগ ঢেলে দিই শাহমানের কথায়। শাহমান বলে চলেন, ‘গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ থেকে চিত্র সমালোচনা—নানা বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করি তখন। ছাপাও হচ্ছিল সেসব বিভিন্ন পত্রিকায়।’
এভাবেই দুটি বছর অতিবাহিত হয় শাহমানের। কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন উচ্চমাধ্যমিক। তারপর ভর্তি পরীক্ষা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখনো ঠিক করেননি তিনি নাট্যকলা বিভাগেই পড়বেন। ‘ইচ্ছা ছিল আইন অথবা অর্থনীতি বিষয়ে পড়ব।’ কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় রোল একটু পেছনের দিকে থাকায় সে ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি তাঁর। সুযোগ পেলেন নাট্যকলায় ভর্তি হওয়ার। সেটা অবশ্য শাপে বরই হয়েছে শাহমানের। এই বিভাগ থেকে শাহমান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুই পর্যায়েই অর্জন করেছেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব।
সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে শাহমান আবার স্মৃতিতে নিমজ্জিত: ‘প্রথম কয়েকটা ক্লাস করার পরই বুঝতে পারি, নাটকের বিচিত্র বিষয়গুলো আমাকে টানছে। জোয়ারের জলের মতো টানছে। এই টানে ভেসে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিচ্ছু করার নেই।’
শাহমান তারপর সত্যি সত্যি নাটকের প্রেমে ভাসতে শুরু করলেন। ভাসতে ভাসইে হাত দিলেন নাটক অনুবাদের কাজে। হ্যারল্ট পিন্টারের নাটক থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বিখ্যাত পাঁচ-পাঁচটি নাটক বাংলায় অনুবাদ করলেন। লিখতে শুরু করলেন মৌলিক নাটক। অশেষ কৃত্য, ফণা, নছিমন, বিদেহ ইত্যাদি মৌলিক নাটক লেখার পাশাপাশি নাটক নির্দেশনার কাজেও হাতেখড়ি হয় তাঁর এই সময়েই। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত যুব নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন গত বছর। ওই উৎসবের জন্য তিনি ব্রেখটের সিদ্ধান্ত নাটক অনুবাদ করেছিলেন। সেই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এই নাটকের সহকারী নির্দেশকের।
শাহমানের দিনমানের সবটা দখল করে থাকে নাটক। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে এই দখলদারি বেড়েছে আরও বহুগুণ। নাটক নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন, অনেক পরিকল্পনা। ‘আমি চাই এ দেশে নাটকের পঠন-পাঠন আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত হোক। সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে না হলেও অন্তত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাট্যকলা বিভাগ থাকুক। আর শুধু দেশজ উপাদান নয়, বরং সারা পৃথিবীর নাটক থেকে উপাদান নিয়ে নির্মিত হোক বাংলাদেশের নাটক। আমি নিজেও সেই পথেই হাটছি।’ বলছিলেন শাহমান শাহরিয়ার।

No comments

Powered by Blogger.