প্রথম বাংলা ব্যালটে ভোট দেওয়ায় উচ্ছ্বাস by মিজানুর রহমান খান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের জন্য এবার সৃষ্টি হয়েছে একটি নতুন ইতিহাস। এই প্রথমবারের মতো পুরোপুরি বাংলায় ছাপা ব্যালট পেপারে ভোট দিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকেরা।


এই ইতিহাসের সৃষ্টি মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রামেক শহরে।
৬ নভেম্বর স্থানীয় সময় সকাল সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫০০ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন ভোট দিয়েছেন বাংলায় ছাপা ব্যালট পেপারে।
এর মূল উদ্যোক্তাদের একজন হলেন এহসান তাকবিম। তিনি মিশিগানে আছেন ৩০ বছরের বেশি। তিনি মিশিগানের গভর্নর মনোনীত কমিশনার হিসেবে কাজ করছেন ২০০৮ সাল থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনে জীবনের প্রথম বাংলা ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত তাকবিম।
রাজ্যের বৃহত্তম নগর ডেট্রয়েটঘেঁষা ছোট হ্যামট্রামেক শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশই বাঙালি। শহরের মেয়রের নেতৃত্বাধীন ছয় কাউন্সিলরের পর্ষদে দুজনই প্রবাসী বাংলাদেশি। এঁরা হলেন এনাম মিয়া ও মো. কামরুল হাসান। জানা গেল, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত কোনো বাঙালি মেয়র নির্বাচিত হননি। কিন্তু প্রথম ডেপুটি মেয়র এই হ্যামট্রামেক শহরেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তিনি ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কংগ্রেসম্যান হ্যানসেন ক্লার্ক এই এলাকারই মানুষ।
তাকবিম বললেন, ‘প্রথম বাংলা ব্যালট পেপারের ব্যবহার হয় গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ককাসে। এরপর গত আগস্টে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে এই শহরের বাংলাদেশিরা বাংলা ব্যালটেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। গত আদমশুমারিতে নাগরিকদের জাতিগত পরিচয়ের জায়গায় আমরা সুচিন্তিতভাবে প্রথমবার বাঙালির পরিবর্তে বাংলাদেশি লিখেছি। এই শহরে আমাদের চেয়ে পূর্ব ইউরোপীয় ও ইয়েমেনিরা সংখ্যায় বেশি। কিন্তু তাদের মাতৃভাষায় ব্যালট পেপার হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের কমিউনিটির সক্রিয় উদ্যোগের ফলেই।’
হ্যামট্রামেকের আগামীবারের মেয়র নির্বাচনে মো. কামরুল হাসানকে দাঁড় করানোর প্রস্তুতিও চলছে।
ধীরগতিতে হলেও বাংলাদেশি মার্কিনরা দেশটির মূল রাজনৈতিক স্রোতধারায় মেশার প্রবণতা দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ও সক্রিয়তা প্রথাগতভাবে এখনো ডেমোক্র্যাট দলের পক্ষে থাকলেও রিপাবলিকানদের পক্ষে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে।
৬ নভেম্বরের নির্বাচনের ব্যালট পেপারে চার বাংলাদেশি মার্কিনের নাম রয়েছে। এঁদের তিনজন স্থানীয় সরকার এবং একজন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হতে লড়ছেন।
নিউজার্সির প্যাটারসনে স্থানীয় সরকারের একটি আসনে দুজন বাঙালি পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন। চার মাস আগে উত্তর নিউজার্সিতে প্রথম বাঙালি কাউন্সিলম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আখতারুজ্জামান। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনের পরপরই তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠে। আদালত তাঁর নির্বাচন বাতিল করেন। শূন্য ঘোষিত পদের পুনর্নির্বাচনে তিনিও প্রার্থী হয়েছেন। প্যাটারসনে প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি থাকে।
নিউজার্সির প্লেইন্সবরোতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও মুক্তিযোদ্ধা নূরন নবী ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলম্যান পদে লড়ছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গদের ভোটে তিনি বর্তমানে কাউন্সিলম্যান আছেন। তাঁর দলীয় অন্য সহ-প্রার্থী হলেন নিল লুইস। তাঁদের প্রতিপক্ষ হলেন রিপাবলিকান দলীয় ম্যারিওজি দোয়েল লিওন ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণা জগনাথন। নূরন নবী প্রথম আলোকে বলেন, এ এলাকায় বাংলাদেশি ভোটারের সংখ্যা ১২। আর তাঁর ভোটব্যাংক বলতে চারটি। তিনি নিজে, স্ত্রী ও দুই ছেলে। কথা বলার সময় নূরন নবী সপরিবারে ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি পুনর্নির্বাচিত হতে আশাবাদী। আগের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানেই নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মিশিগানের রাজ্য সিনেটে বাংলাদেশি কৃতী চিকিৎসক দেবাশীষ মৃধা ২০১০ সালে শক্ত লড়াই দিয়েছিলেন। ভার্জিনিয়া, শিকাগো ও নিউইয়র্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাজ্য সিনেটে লড়াইয়ের ইতিহাস থাকলেও এখনো জয় মেলেনি।
মার্কিন রাজনীতির মূলধারায় বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিকদের সম্পৃক্ততা ও এর সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতামত মিশ্র।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হক ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি মেরিল্যান্ড রাজ্য সরকারের স্যানিটেশন-বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে মূলধারার রাজনীতিতে মেশার প্রবণতা খুবই কম। প্লেইন্সবরোর কাউন্সিলম্যান নূরন নবী অবশ্য বলেন, এটা ওপরের দিকে না হলেও তৃণমূলে শুরু হয়ে গেছে। অন্তত পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার বাংলাদেশি এবার ওবামার পক্ষে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.