অযৌক্তিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য অগ্রহণযোগ্য- জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে। কিন্তু গত সোমবার সমাবেশের নামে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংজ্ঞায় পড়ে না।


প্রথমত, এর মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, একটি অনৈতিক ও অযৌক্তিক কর্মসূচির নামে তারা যানবাহনে আগুন দিয়ে জনগণের সম্পত্তি বিনষ্টই করেনি, বিচার-প্রক্রিয়া ব্যাহত করারও চেষ্টা চালাচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার একটি আইনি প্রক্রিয়া। সেখানে প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাচ্ছেন। এমনকি এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগও থাকছে। সে ক্ষেত্রে বিচার বন্ধের দাবিতে রাজপথ গরম করা আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো ছাড়া আর কিছু নয়। সোমবার জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা সমাবেশের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ছবি মিথ্যে বলে না। গতকাল প্রথম আলোর প্রথম পাতায় কুষ্টিয়ায় একজন পুলিশ সদস্যের গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকাই প্রমাণ করে, ওই দলটির নেতা-কর্মীরা কতটা বেপরোয়া ছিলেন। আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ, এই সংঘর্ষে কেবল জামায়াতের নেতা-কর্মী বা পুলিশের সদস্যরাই আহত হননি, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাহত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্পদ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিক, সেটাও কোনোভাবে কাম্য নয়। কিন্তু অযৌক্তিক কর্মসূচি পালনের নামে কোনো দল বা সংগঠন দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সজাগ থাকবে আশা করি। জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও তাদের মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে জনমনে শঙ্কা বাড়ে, পরিস্থিতির অবনতির ঘটে কিংবা স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পায়।

No comments

Powered by Blogger.