জামায়াতের সহিংসতা-অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা

দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করে তুলতে জামায়াতের তৎপরতা নতুন করে গত সোমবার এবং গতকাল মঙ্গলবার দেখা গেল ঢাকাসহ সারা দেশে। আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে,


একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতেই জামায়াত পরিকল্পিত সহিংস তাণ্ডব চালাচ্ছে। সোমবার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালনের দিনেই সাক্ষী অপহরণের অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ঘটনা ঘটে। এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের দিন রাজপথে অনুরূপ তাণ্ডব চলে।
একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষ যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত, তখন এ দেশেরই কিছু মানুষকে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করতে দেখা গেছে। সে সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয় রাজাকার, আলশামস, আলবদর প্রভৃতি বাহিনী। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশজুড়ে যে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালায়, সে অপকর্মে সহযোগী হিসেবে কাজ করে এসব বাহিনীর সদস্যরা। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে আলবদর বাহিনীর সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টিও সবার জানা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার চলছে। জামায়াত সেই বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কারণ এ বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে জামায়াতের অস্তিত্ব। দলটির শীর্ষ নেতারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। ফলে গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে জামায়াত। স্বাভাবিকভাবেই এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্যই জামায়াত নতুন নতুন কৌশল খুঁজে বের করছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় জামায়াত সোমবার পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।
সারা দেশে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জামায়াত পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে চায় বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে এ হামলার ভেতর দিয়ে দলটি বোধ হয় বুঝিয়ে দিতে চায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তারা পিছপা হবে না। এর আগেও জামায়াত অতর্কিতে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোম ও মঙ্গলবারের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। জামায়াত যে সহিংস হয়ে উঠতে পারে, এমন তথ্য গোয়েন্দা রিপোর্টে দেওয়া হয়েছিল। সোমবার ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হলেও রাজপথের সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়নি।
কর্মসূচি পালনের অধিকার যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই আছে। কিন্তু কর্মসূচি পালনের নামে সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না। জামায়াত সহিংসতার পথই বেছে নিয়েছে।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগামী দিনগুলোতে আরো তৎপর হবে। পাশাপাশি সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রেও সজাগ দৃষ্টি রাখবে। দেশের ভেতরে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির যেকোনো তৎপরতা রুখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.