নতুনের জানালা- মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ভারতীয় উপমহাদেশে আগামী ২০০ বছরে মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে। এ কারণে সৃষ্টি হতে পারে খাদ্যসংকট। এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।


গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ লেটার্স-এ।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, এই সংকট বড় আকার ধারণ করবে ২১৫০ সালে। ২১৫০ থেকে ২২০০ সাল পর্যন্ত প্রতি পাঁচ বছর পর পর মৌসুমি বৃষ্টি বন্ধ থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১৫০ থেকে ২২০০ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে ১০ বার মৌসুমি বৃষ্টিপাত ব্যাহত হবে। এ সময়ে দৈনিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হবে মাত্র ৩ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ৬ থেকে ৭ মিলিমিটার। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দায়ী করছেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে। এর মূল কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও বাতাসের গতিপথের পরিবর্তন।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারত ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই বৃষ্টিপাত এ অঞ্চলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ধান, গম, ভুট্টা—এ তিনটি প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদনে এটি বড় ভূমিকা পালন করে। ভারত ২০০৯ সালে প্রচণ্ড অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে। স্বাভাবিকের ১০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাতেই এ অঞ্চলে বর্তমানে বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।
গবেষকেরা সাধারণ বৃষ্টিপাতের চেয়ে ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হলে তাকে বিপর্যয় বলে থাকেন। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ১৮৭০ সালের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ ধরনের বিপর্যয় আর ঘটেনি। গত শতাব্দীতে ভারতের তাপমাত্রা বেশ সুস্থির ছিল।
এ গবেষণায় দেখানো হয়, ২২০০ সালে শিল্প-কারখানার কারণে সম্ভাব্য তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ হবে ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জাতিসংঘের গবেষণা অনুযায়ী, ২১০০ সাল নাগাদ এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ১ থেকে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি বলতে বোঝায় বেশি জলীয় বাষ্প এবং বেশি বৃষ্টিপাত। এর পরও এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যাবে। কারণ, এ প্রক্রিয়ায় সমস্যা করেছে প্যাসিফিক ওয়ালকার প্রবাহ নামের পরিচিত বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ সাধারণত পশ্চিম ভারত মহাসাগরে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বয়ে আনে।
এল নিনোর কারণে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে প্যাসিফিক ওয়ালকার কিছুটা পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সমস্যা হচ্ছে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময়। গবেষকদের মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্যাসিফিক ওয়ালকারের ফলে চাপ বাড়লেও এল নিনো বাড়বে না।
২০০৭ সালে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সঙ্গে বর্তমান প্রতিবেদনের পার্থক্য দেখা যায়। কারণ, সেখানে বলা হয়েছিল, এ শতাব্দীতে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হবে।
ইতিমধ্যে ২০০টি দেশ তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে সম্মত হয়েছে। এতে বৃষ্টিপাত-স্বল্পতা, বন্যা ও সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি সহনীয় মাত্রায় থাকতে পারে। টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.