আস্থা অর্জনের চেষ্টা, না তামাশা?- ইসির সংলাপ পরিকল্পনা

আলোচ্যসূচি: ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম ও অন্যান্য ইস্যু। আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দল ৩৮টি। সংলাপের জন্য বরাদ্দ সময় এক দিন। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সারসংক্ষেপ চিত্রটি এ রকম।


প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে দেখানো হয়েছে যে সারা দিন কোনো ধরনের বিরতি ছাড়া বৈঠক হলেও প্রতিটি রাজনৈতিক দল সময় পাবে মাত্র ১২ মিনিট! এটা কি সংলাপ হবে, নাকি সংলাপের নামে তামাশা?
নির্বাচন কমিশনে বসে যাঁরা এই পরিকল্পনা করেছেন বা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের বাস্তব জ্ঞান ও বোধবুদ্ধির তারিফ(?) না করে উপায় নেই! নির্বাচন কমিশনের কাজ কী? মূলত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া ও আয়োজন করা। আর এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংশ্লিষ্ট যে গোষ্ঠী, তা হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিতও। এই দলগুলোকে এর চেয়ে বেশি সময় দেওয়ার মতো সময় নেই নির্বাচন কমিশনের?
নির্বাচন কমিশন এক দিনে ৩৮টি দলের সঙ্গে সংলাপ করার যে পরিকল্পনা করেছে তাতে এটা মনে হচ্ছে, তারা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘সংলাপ’ নামক একটি দায়িত্ব সারতে চাইছে। এর যা অর্থ দাঁড়ায় তা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সম্ভবত এ ধরনের সংলাপকে খুব কার্যকর বলে মনে করে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা নির্ধারণ বা ভোটার তালিকাবিষয়ক কোনো পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করে না। নির্বাচন কমিশনের আচরণে যা প্রকাশ পেয়েছে, বাস্তবেও যদি তারা তা-ই মনে করে তবে আমরা বলব, এই এক দিন সময় নষ্ট করারই বা দরকার কী!
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে, নানা বিষয়ে এই পক্ষ দুটির মধ্যে মতবিনিময় ও পরামর্শ হবে—এমনটিকেই আমরা আদর্শ বলে জানি। আমাদের বৈরী রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমনিতেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সব দলের আস্থা অর্জন করা কঠিন। এই বাস্তবতায় বর্তমান কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় আনা। এ ক্ষেত্রে সবার পরামর্শ এবং কোনো বিষয়ে অভিযোগ বা আপত্তি থাকলে তা ধৈর্য ধরে শোনার মানসিকতা থাকা জরুরি। কিন্তু কমিশন এর বিপরীত পথেই এগোচ্ছে বলে মনে হয়। এমন অবস্থায় আস্থার সংকট কাটবে কী করে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে। সিইসি দেশে ফিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি অর্থবহ সংলাপের আয়োজন করবেন আশা করি। কেননা এক দিনের নিয়ম রক্ষার সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারে কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

No comments

Powered by Blogger.