ক্ষমতায়ন

১৯১৭ সাল থেকে সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সংগীতে পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকতার অন্যতম সম্মানের পুরস্কার হিসেবে মানা হয় একে। হাঙ্গেরিতে জন্ম নেওয়া মার্কিন প্রকাশক জোসেফ পুলিৎজারের ইচ্ছানুযায়ী এ পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।


নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এটি পরিচালনা করে। এ বছর তিনজন নারী সাংবাদিকতায় পেয়েছেন এই পুরস্কার। তাঁদের নিয়ে এই প্রতিবেদন—

ম্যারি শ্মিচ
‘সানস্ক্রিন ব্যবহার করো’, ‘গান গাও’, ‘যৌবনের শক্তি আর সৌন্দর্য উপভোগ করো’, ‘অন্যের হূদয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলো না’, ‘হিংসা করে সময় নষ্ট কোরো না’, ‘প্রশংসা মনে রাখো, অপমান ভুলে যাও’, ‘পুরোনো প্রেমপত্র রেখে দাও, পুরোনো ব্যাংকের হিসাব ফেলে দাও’, ‘চুল নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোরো না। তাতে ৪০ বছরেই পঁচাশির মতো দেখাবে।’ এমনই সব উপদেশ নিয়ে শুরু হয়েছিল ম্যারি শ্মিচের কলাম। সেটা ১৯৯৭ সালের কথা। শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকায় ছাপা শুরু হয় তা। ১৯৯৮ সালে এসব নিয়ে বইও বেরিয়েছে।
পরের বছরগুলোতে ম্যারি লিখে গেছেন নানা বিষয়ে। কখনো শিকাগো শহরে মেরিলিন মনরোর বিশাল মূর্তি নিয়ে। অন্তর্বাস প্রধান না করে কোনো নারীমূর্তি স্থাপন করা যায় না? প্রশ্ন করেছেন তিনি। লিখেছেন শিকাগোর মেয়র নির্বাচন নিয়ে। চেয়েছেন এমন প্রার্থী, যিনি শহরের সমস্যাগুলো বুঝে তা ঠিক করার পদক্ষেপ নেবেন। তিনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন, তা যেন মেয়র নির্বাচনের মূল বিষয় হয়ে না দাঁড়ায়। ভয়কে জয় করে নিত্যদিনের জীবনে এগিয়ে যাওয়া নিয়েও লিখেছেন তিনি। অটিজমের শিকার ছোট বোনটি যখন নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে শেখে, সেই সময়কেই সবচেয়ে সুন্দর সময় বলেই মানেন ম্যারি। বছরের পর বছর তুলে ধরেছেন নিজের শহরের ছোটখাটো ঘটনা, নিজেদের সংস্কৃতির নানা বিষয়। আর এরই স্বীকৃতি মিলল এ বছর তাঁর পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে। সংবাদভাষ্য (কমেন্টারি) বিভাগে এ পুরস্কার পান তিনি। ম্যারি পড়াশোনা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে। জন্মেছেন সাভানা, জর্জিয়ায়। বেড়ে উঠেছেন ফিনিক্স, অ্যারিজোনায়। জনপ্রিয় কমিক স্ট্রিপ ব্রেণ্ডা স্টার, রিপোর্টার-এর লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এক সুন্দরী, সাহসী সাংবাদিকের জীবন নিয়ে এই কমিক।

সারা গ্যানিম
মাত্র ২৫ বছর বয়স তাঁর। তৃতীয় কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে সারা গ্যানিম তাঁর কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে জিতেছেন পুলিৎজার পুরস্কার। পেনসিলভানিয়ার দ্য প্যাট্রিয়ট নিউজ-এ কাজ করছেন তিনি। পেনসিলভানিয়ার বিখ্যাত ফুটবল কোচ জেরি স্যানডাস্কির যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেন তিনি। সারা গ্যানিম সিএনএনের প্রদায়ক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছেন।

আইলিন সুলিভান
মুসলিম অধিবাসীদের ওপর নিউইয়র্ক পুলিশের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন তিনি। এপি থেকে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন আইলিন সুলিভান। নয়-এগারোতে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই নিউইয়র্ক পুলিশের এসব তৎপরতা শুরু হয়। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করে এপি। তাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে, পুলিশের ছদ্মবেশে কর্মকর্তারা মিশে যান সন্দেহভাজন লোকালয়ে, অপরাধ করা হোক বা না হোক, মুসলিম হলেই সন্দেহ করা হয় তাদের। আইলিন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এই দলেরই একজন। অন্যরা হলেন ম্যাট আপুজো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান ও ক্রিস হলি।
পেনসিলভানিয়ার ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। এখন ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকেন এই সাংবাদিক।
গ্রন্থনা: রুহিনা তাসকিন
সূত্র: পুলিৎজার ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, শিকাগো ট্রিবিউন

No comments

Powered by Blogger.