এক বছরে ৯৫ জনের প্রাণহানি- সিরাজগঞ্জে দুই মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০ বাঁক by এনামুল হক

নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত এবং ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।


মহাসড়কের যত্রতত্র রয়েছে নছিমন-করিমন ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড। বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে করাতকলের গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়।
এসব কারণে ওই দুটি সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এক বছরে ওই দুটি মহাসড়কে দুই শতাধিক দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাসড়ক দুটির বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক বাঁকের (মোড়) মধ্যে ১০টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া তালগাছী বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল বাসস্ট্যান্ড, উল্লাপাড়া বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের নালা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাতী, সিরাজগঞ্জ রোড, বালসাবাড়ী, শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছী, বাঘাবাড়ী, রায়গঞ্জ এলাকার চান্দাইকোনা, ঘুরকা এলাকায় ১০টি করাতকল রয়েছে। করাতকলগুলোর গাছের গুঁড়ি সড়কের পাশে রাখায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নছিমন-করিমনের স্ট্যান্ডে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
বাঘাবাড়ী থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত সড়কে দিলরুবা বাসস্ট্যান্ডের কাছে ও বিসিক বাসস্ট্যান্ডের অদূরে, শক্তিপুর সেতুর কাছে, জুংলিদহ সেতুর কাছে, টেটিয়ার কান্দা, দুর্গাদহ, গাড়াদহ খেয়াঘাট এলাকা, জুংলিপুর, বালসাবাড়ী কাঁঠালতলা, উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের কাছে ও রেলক্রসিংয়ের অদূরে এবং ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঝাউল উড়ালসেতুর দুই পাশে দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এসব স্থানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
হাটিকুমরুল এলাকার ট্রাকচালক সুকুমার রায় জানান, বাঁকগুলো পার হওয়ার সময় একদিক থেকে অন্যদিকের কোনো গাড়ি দেখা যায় না। যে কারণে প্রায়ই যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে করাতকলের কাঠের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা কোচ-বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জিন্নাহ আলমাজী জানান, অপরিকল্পিতভাবে মহাসড়কে বাঁকগুলো নির্মাণ করা হয়েছে; বাঁকের সংখ্যাও বেশি। তা ছাড়া মহাসড়কের ওপর হাট-বাজার বসায় ও নানা স্থানে খানাখন্দ থাকায় সড়কে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি যথাক্রমে মেহেদী হাসান ও ফরিদুল ইসলাম জানান, গত এক বছরে এই দুটি সড়কে দুই শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। সড়কে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও চালকদের অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা সড়কের বাঁক বা মোড়ে ঘটার কথা স্বীকার করে তাঁরা বলেন, চালকেরা এসব স্থানে নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি না চালানোয় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁরা জানান, মহাসড়কের নছিমন-করিমন ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড মহাসড়ক থেকে সরানোর অভিযান শুরু হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরে আলম জানান, নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কটি অনেক পুরোনো। তখনকার যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে সড়কটি নির্মিত বলে বাঁকগুলো রয়েছে। হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন করার প্রস্তাব দেওয়া আছে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় বাঁক ও নালা ব্যবস্থাপনার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। করাতকলগুলোর মালিকদের গাছের গুঁড়ি সরানোর জন্য একাধিকবার বলা হলেও তাঁরা তা শোনে না। আর হাট-বাজার, নছিমন-করিমন স্ট্যান্ড অপসারণের দায়িত্ব প্রশাসনের। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.