রাজপথে তাণ্ডব-জামায়াতের ধৃষ্টতা

জামায়াতে ইসলামী সোমবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশের নামে যে ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে, তাকে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন প্রতিবেদনে 'তাণ্ডব' ও 'শক্তি প্রদর্শন' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।


তাদের এই বিক্ষোভ ও সমাবেশ ছিল দলীয় নেতাদের মুক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধের দাবিতে। এই বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গিয়ে দলের কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং যানবাহন ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে। মঙ্গলবারও দলটির নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম ও রংপুরে লাঠি এবং ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে ভাংচুর চালায়। স্পষ্টতই এই সহিংসতা চালানো কর্মসূচি ছিল পরিকল্পিত ও সংগঠিত। ঢাকার কর্মসূচির বিবরণ দিতে গিয়ে মঙ্গলবার একটি দৈনিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানিতে লেখা হয়েছে, 'জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের অনেকে বাজারের থলেতে করে আনা ইট নিক্ষেপ করে।' জামায়াতে ইসলামী তাদের অভিপ্রায় কখনও গোপন করেনি। তাদের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকেই একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল। তাদের হাতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী ও নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। এ দলের নেতৃত্বে গঠিত রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা হত্যা-ধর্ষণ-লুণ্ঠনের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করেছে। দেশবাসী এ অপরাধ কখনও ক্ষমা করেনি। বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি নিয়েছে কঠোর মনোভাব। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ফার্স্ট টাইম ভোটাররা দেশব্যাপী প্রচার চালিয়েছে_ 'একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ভোট নয়।' এমনকি এ দলটির সঙ্গে জোট করার জন্য বিএনপিকেও তারা অভিযুক্ত করেছে। নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা শুধু নয়, বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের উল্লেখযোগ্য অংশও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনকে দায়ী করেছে। মহাজোটের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক অধিকারের সুযোগ নিয়ে একাত্তরের অপরাধীদের বিচার বন্ধ ও কারাগার থেকে মুক্তির দাবি তোলা ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। জামায়াতে ইসলামীর এ ধরনের দাবির প্রতি জনগণের কোনো জনসমর্থন নেই। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতেই নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে হয়রানি না করার দাবি যৌক্তিক। বিশ্বসমাজও এ ইস্যুতে সরকারের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এ বিচার অবৈধ দাবি করে তা বানচালের জন্য রাজপথে সহিংসতা সৃষ্টি ও জনজীবন অশান্ত করার যে কোনো প্রচেষ্টা কোনোভাবেই মানা যায় না। সোমবার দেশব্যাপী জামায়াতি তাণ্ডবের আগাম খবরের বিষয়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। গত বছর সেপ্টেম্বরে এ দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আকস্মিকভাবে রাজধানীর বিজয়নগর, কাকরাইল এলাকায় ভাংচুর, অগি্নসংযোগ এবং পুলিশের প্রতি হিংস্র ও মারমুখী আচরণ করে। ওই অভিজ্ঞতার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জামায়াতে ইসলামীর মিছিল-সমাবেশের প্রতি কঠোর নজরদারি বজায় রেখে চলছিল। ঘোষণা দিয়েই গত সোমবার জামায়াতে ইসলামী রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলায় প্রস্তুতির যথেষ্ট অভাব দেখা গেছে। এর অর্থ হচ্ছে, সতর্কতায় শৈথিল্য। এ ধরনের সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও সতর্ক থাকবে এটাই শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ আশা করে।
 

No comments

Powered by Blogger.