কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ- সেবার জন্য ব্রত by তৌহিদী হাসান

মধ্যরাতে পড়ার ফাঁকে ভূত দেখেছেন সেতু। সত্যিই কি ভূত! সে রাতে সেতু আর ঘুমাতে পারেননি। সকালবেলা ক্লাসের পর সেতু তাঁর অন্য বন্ধুদের কাছে এ বিষয়টা জানালেন। সবাই তো হেসে কুটিকুটি। চিকিৎসাশাস্ত্রে ভূত বলে কিছু নেই। এটা নিতান্তই মানসিক ব্যাপার।


কদিন আগে এক সকালে গিয়েছিলাম কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে (অস্থায়ী ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া ম্যাটস)। তখন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা সেতুকে কেন্দ্র করে গল্প করছিলেন। মাত্র এক বছর আগে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১০ অক্টোবর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে সারা দিন ধরে আনন্দের সঙ্গে বর্ষপূর্তি পালন করলেন। আনন্দ তো করবই। কথাটা বলছিলেন ইরিন। নিজস্ব ভবন নেই, নেই কোনো ক্যাম্পাস। তাতে কী, এসব না থেকেও অন্যান্য কলেজ থেকে বেশ ভালো আছেন বলে মনে করেন আলভী। অবশ্য যুক্তিটা তাঁর ভিন্ন। যেমন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ক্লাসকক্ষ, শিক্ষকদের সঙ্গে যেকোনো ব্যাপারে সরাসরি যোগাযোগ ও পড়া সম্পর্কে তাৎক্ষণিক বুঝিয়ে নেওয়া। এক বছরের শুরুতেই অনেক কিছু ব্যবহারিক পাচ্ছেন, যেগুলো অন্য কলেজে তেমন একটা নেই। অস্থায়ী ক্যাম্পাসসংলগ্ন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ইচ্ছে করলেই সবাই মিলে সেখানে গিয়ে ব্যবহারিকটা বুঝে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষক সম্পর্কে কলেজের শিক্ষার্থী অমল ও সানোয়ার জানালেন, ‘শিক্ষকেরা আমাদের বাবার মতো। ৫০ জন শিক্ষার্থী যাঁরা দেশের প্রায় ২৫টি জেলা থেকে এসেছেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দূরের জেলার। এক বছরে মনেই হয়নি তাঁরা বাবা-মা ছেড়ে আছেন। কলেজের ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে পৃথক দুটি আবাসিক ভবন।’
‘এক কক্ষে মাত্র দুজন করে থাকি। এত আরাম-আয়েসে থাকার সুযোগ অন্য কোনো মেডিকেল কলেজে আছে কি না সন্দেহ!’ জানালেন আলভী ও মাসুমা। নানা বিষয় নিয়ে খুনসুটি চলে অন্তেষা আর পিয়ার মধ্যে। এত কিছুর পরও পড়াশোনা নিয়ে তাঁরা খুবই সচেতন। নিয়ম করে পড়া আর গ্রুপ আলোচনা—এটা কখনোই বাদ পড়ে না বলে জানালেন শিলা। শ্রাবন্তীর মতে, বড় হয়ে দেশের মানুষের সেবা করাই হবে প্রধান লক্ষ্য। তেমনটিই দেখা গেল তাঁদের পত্রিকা পড়ার কক্ষে দেয়ালে সাঁটানো অনুবৃত্তি নামে একটি দেয়াল পত্রিকায়। কথা হয় কলেজের অধ্যক্ষ ইফতেখার মাহমুদের সঙ্গে। কলেজ সম্পর্কে তিনি খুবই সন্তুষ্ট। এক বছরে এখানকার ছেলেমেয়েরা একটা পরিবারের মতো রয়েছে। যেন ৫০ ছেলেমেয়ে নিয়ে একটা পরিবার। পড়াশোনা ও থাকার ব্যাপারে সব সময় তাদের খোঁজখবর নেওয়া হয়। এমনকি এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেক অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। আগামী দুই বছরের মধ্যেই নিজস্ব একাডেমিক ভবন ও হলে যেতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।

No comments

Powered by Blogger.