আয়কর মেলা আজ শেষ হচ্ছে

জাতীয় আয়কর মেলার সময় বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে ঢাকাসহ সাত বিভাগীয় শহরে আজ শনিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে আয়কর মেলা। মেলার ৬ষ্ঠ দিন পর্যন্ত সারাদেশে কর আদায় হয়েছে ৬শ’ কোটি টাকার ওপরে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আজ বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।


এ বছর স্বেচ্চায় স্বপ্রণোদিত হয়ে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণসহ কর দিতে মেলায় ছুটে গেছেন করদাতারা। মেলায় এসে অনেকটা অভিভূত করদাতারা! তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া এনবিআরের সকল কার্যক্রমে। অটোমেশন হওয়ার ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত এ বছরের মেলা করদাতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে নতুন ও তরুণ করদাতাদের মধ্যে আয়কর মেলা নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আয়কর রিটার্ন দাখিল, কর দেয়া ও টিআইএন নম্বরে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তি এখন আর ভয়ের কোন ব্যাপার না, বরং অনেক সম্মানের। এ জন্য চলতি বছর দীর্ঘমেয়াদে ও সর্বোচ্চ কর প্রদানকারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এনবিআর। তাঁদের দেয়া হয়েছে ট্যাক্স কার্ড। কমার্শিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন বা সিইপি’র মর্যাদাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরও সকল টিআইএন নম্বর ধারীকে এখনও করের আওতায় আনা যায়নি। দেশে ৩৬ লাখ টিআইএনধারী রয়েছেন এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ১৪ লাখ এবং নিয়মিত কর দিচ্ছেন ৭-৮ লাখ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের করনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সদস্য এমএ কাদের সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, এনবিআর সম্পর্কে করদাতাদের মধ্যে যে নেতিবচাক ধারণা ছিল তা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এনবিআর কোন ভয়ের জায়গা নয়। করদাতাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এনবিআর যে লড়াই শুরু করেছে তাতে সংস্থাটি অনেক সফলও। তিনি বলেন, আয়কর মেলায় স্বপ্রণোদিত হয়ে সবাই কর দিতে ছুটে আসছেন। এনবিআর একটি চমৎকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ তৈরিসহ আরও কিছু সংস্কারের ফলে আগামী তিন বছরে দেশের আয়কর আহরণ দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে আহরণ ২৮ হাজার কোটি টাকা দ্বিগুণ হয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে।
এদিকে রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর কতগুলো পরিকল্পনা সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০৩টি সার্কেল অফিস সম্প্রসারণ করে ৬৪৯ সার্কেল অফিস করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় কর অফিস বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের।
এ ছাড়া আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের আয়কর ব্যবস্থা অটোমেশন করা হয়েছে। ই-পেমেন্টের মাধ্যমে কর পরিশোধ করা যাচ্ছে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল এবং ট্যাক্স ক্যালকুলেটর প্রবর্তন করে ওয়েবসাইটে স্থাপন করা হয়েছে। গত ২০১১-১২ কর বর্ষের সব আয়কর রিটার্নের তথ্য কম্পিউটার ডেটাবেজে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও কর নেট সম্প্রসারণে নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে এনবিআর আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ যুগোপযোগী করে প্রত্যক্ষ কর কোড ২০১২ প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে আইনটি পাস হতে পারে।
এনবিআর বলছে, প্রত্যক্ষ কর একটি প্রগেসিভ কর ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি সামজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। আদর্শ কর ব্যবস্থার লক্ষ্য থাকে প্রত্যক্ষ কর থেকে মোট রাজস্বের সিংহভাগ সংগ্রহ করা। বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে মোট কর রাজস্বের বেশিরভাগ অংশ প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। যদিও বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অনুপাত এখনও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় কম। তবে এনবিআর আদর্শ কর ব্যবস্থার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মোট কর রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদান বৃদ্ধি করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.