শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-ছাত্র-সন্ত্রাসের রাজ্যে by মোহীত উল আলম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের সহপাঠী ছাত্র-সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার পর জুবায়েরের বাবা বলেছেন, ‘জুবায়ের ছিল একটি ফুল, কিন্তু সেই ফুলটিকে ফুটতে দিল না।’ ফুটতে না দেওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করার ইচ্ছা আজকের লেখায়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ছাত্র কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী’ ছাত্রদের নিয়ে বেগম মতিয়া চৌধুরীর মন্তব্য হলো, এদের রাজনৈতিক দল যখন সরকারে থাকে, তখন এরা বাঘ, আর বিরোধী দলে থাকলে এরা বিড়াল। সে অর্থে, সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এখন বাঘ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এখন বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘায়ের অবস্থা হয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মী ছাত্ররা (ছাত্র বলতে আমি ছাত্রীদেরও বোঝাচ্ছি) একা থাকলে খুব বশংবদ আচরণ করে, কিন্তু দলে মিললে এরা কাউকে পরোয়া করে না। এ জন্য বারবার শিক্ষকদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। দলমত-নির্বিশেষে খুব জনপ্রিয় শিক্ষকও ছাত্র-আন্দোলনের সময় বিস্মিত হয়ে লক্ষ করেন যে, তাঁর কথা তাঁর সবচেয়ে আস্থাভাজন ছাত্রটিও শুনছে না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভাগের এ মৌলিক দুর্বলতাটা এখানে যে তাঁরা শেষ বিচারে নিধিরাম সর্দার। কারণ, দলীয় ইস্যু থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাস পরিচালিত হয় মূলত বাইরে থেকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিধর সন্ত্রাসনির্ভর রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় ও আশকারা থেকে, যাদের কাছে (সন্ত্রাসী ছাত্রগোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক নেতারা) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে পুরো প্রশাসন থাকে অসহায়। একজন নির্দলীয় কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও আদর্শবাদী উপাচার্যের পক্ষে এ ধরনের সন্ত্রাসসর্বস্ব ছাত্ররাজনীতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তাঁদের কোনো চারিত্রিক অদক্ষতার কারণে নয়, বরং এ কারণে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনটি যে জরুরি সময়ে রাজনৈতিক বহিঃশক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে, সে কথাটি অনুধাবন করতে না পারায়। সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষকের মৌলিক চরিত্র হচ্ছে অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়ানো এবং সে কারণেই বেশির ভাগ বিবেকসম্পন্ন উপাচার্যের পক্ষে সন্ত্রাসনির্ভর দলীয় ছাত্ররাজনীতির মোকাবিলা করা কঠিন হয়। কারণ, ছাত্রদের শৃঙ্খলায় আনার জন্য তাঁর জানা রাস্তা হচ্ছে মেধার রাস্তা, যে মেধা দিয়ে একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রিত রাখেন। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে বেশির ভাগ উপাচার্যের নিয়োগ ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী সিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে না হয়ে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে হওয়ায় উপাচার্যরা প্রবলভাবে দলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী শিক্ষকও হতে পারেন এবং তখন তাঁরা সরকারি দলের সমর্থিত ছাত্রদের সাহায্যে পুষ্টিত হতে মনে মনে চাইতেও পারেন। তখন সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্ররাজনীতিতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের ইন্ধন থাকার অভিযোগটি ওঠে।
যেকোনো পরিপ্রেক্ষিতের একটি আদর্শিক অবস্থান থাকে, আর একটি প্রায়োগিক দিক থাকে। বাংলাদেশের সরকারি উচ্চাঙ্গ শিক্ষাঙ্গনে এ দুটির মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বিরোধিতায় পরিণত হচ্ছে। দলীয় রাজনীতির বড় সমস্যা হচ্ছে, আদর্শগত অবস্থান থেকে সরে এসে প্রায়োগিক অবস্থানে আসার পর প্রয়োগকৃত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে একটির সঙ্গে আরেকটির মিল খুঁজে না পাওয়া। এটি জাতীয় রাজনীতিতে যেমন প্রতিফলিত, তেমনি ছাত্ররাজনীতিতেও।
একটু খোলসা করি, যেমন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার ধর্মনিরপেক্ষতায় উজ্জীবিত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি উদার থেকে রক্ষণশীল চেতনায় উজ্জীবিত, আর জামায়াতে ইসলামী একটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত। এগুলো হচ্ছে প্রধান তিনটি দলের আদর্শিক অবস্থান। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এই তিনটি দলের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আচরণের মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিল বিভ্রান্তকরভাবে বেশি। যেমন, আজকে ছাত্রলীগের জুবায়ের যদি দলীয় অন্তর্কোন্দলে মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে ঠিক ৩৮ বছর আগে ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে কোহিনূরসহ ছাত্রলীগের সাতজন কর্মী (কর্মী বলতে আমি নেতাদেরও বোঝাচ্ছি) ঠিক একই অন্তর্কোন্দলে মারা গিয়েছিল, সেটি যেমন একটি মিল, তেমনি বিএনপির শাসনের সময় নীরু, জিন্নাহ, মাহবুব, পাগলা শহীদসহ অনেক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী শিক্ষাঙ্গনে অন্তর্কোন্দলীয় সংঘর্ষ থেকে নিহত হওয়ার ঘটনারও একই পরিণতি—ছাত্রের প্রাণ খোয়ানো। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ১৯৮৬ সালে এরশাদপন্থী ছাত্রসংগঠন নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হামিদের কবজি কাটার পর চবি ক্যাম্পাস দখলের যে উদ্বোধন করেছিল, সেখান থেকে আজ পর্যন্ত তারা এখনো আধিপত্য বজায় রেখেছে। ১৯৯০ সালে তাদের হাতে নিহত হয় ফারুখ এবং আরও অনেক ছাত্র ছাত্রশিবিরের হাতে প্রাণ হারায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক এনামুল হকের জ্যেষ্ঠ ছেলে, যে ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা (যার নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না)। যদিও আদর্শগত অবস্থান থেকে ছাত্রশিবিরের অভিভাবক দল এবং বিএনপির অভিভাবক দলের আদর্শিক অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে কাছাকাছি।
যে মিলটির কথা বলছিলাম, যেটি আদর্শের ভড়ংয়ের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না, সেটা হলো, দলীয় আদর্শের নামে সাতজন ছাত্রকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মৃত্যু নিশ্চিত করা যে কথা এবং রড দিয়ে প্রতিপক্ষ দলের ছাত্রকর্মীকে হত্যা করা যে কথা, তেমনি বুকে ধর্মগ্রন্থ ঝুলিয়ে কিরিচ দিয়ে সহপাঠীকে জবাই করাও একই কথা। জুবায়েরের বাবার কথাই প্রতিধ্বনিত হবে যে, ‘ফুল ছিল, কিন্তু ফুলটাকে ফুটতে দিল না।’ বাস্তব ক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও সংঘাতমূলক ছাত্ররাজনীতি উদ্ভূত ছাত্র হত্যার প্রেক্ষাপটের প্রায়োগিক দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই, যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শিক অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন।
পার্থক্য কেন নেই, তার কারণটা দলীয় রাজনীতির মনস্তত্ত্বের গভীরে সুপ্রোথিত একটি আশঙ্কা থেকে উত্থিত। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চলছে। আদর্শিক অবস্থান হলো, সংসদীয় নির্বাচনে একদল বেশির ভাগ আসনে জিতে সরকার গঠন করবে, দ্বিতীয় দলটি প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু নির্বাচনে দেশ শাসন করার রায় পাওয়া বা না পাওয়া এক কথা, আর নির্বাচনোত্তর সময়ে দেশ চালানো বা সরকারের বিরোধী ভূমিকা পালন করা অন্য কথা। সেখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন—জমি, আবাসন, রাস্তা এবং সেতুর টোল থেকে শুরু করে টেন্ডার, ব্যবসা, আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন অর্থকরী ক্ষেত্রে সরকারি দলসহ বিভিন্ন দল নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। সে আধিপত্য বজায় রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ভোটাররা অপাঙেক্তয়, মেধার কার্যকারিতাও উপেক্ষণীয়, কিন্তু সেখানে তাদের দরকার পেশির—রাস্তা দখল করার জোর, সেতুর টোল সংগ্রহ করার জোর। এগুলো প্রায় সবগুলোই অবৈধ কর্ম বলে পেশির জোরের দরকার হয়। ভোট শাসনে আনে কিংবা শাসন থেকে বিদায় দেয়, কিন্তু অবৈধ আধিপত্য বজায়ে দরকার হয় যুবপেশির।
ছাত্রদের সন্ত্রাসমুখর রাজনীতিতে প্রলুব্ধ করার ক্ষেত্রে আদর্শ এবং প্রয়োগের মধ্যেও এখানে একটা চূড়ান্ত স্ববিরোধিতা খেলা করছে। সাধারণভাবে ছাত্ররা আদর্শমুখী থাকে। তারা বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করে ওই আদর্শের জিগির ধরে। কিন্তু তাদের ওপর অভিভাবক রাজনৈতিক দলটি নির্ভর করতে চায় না। ওই রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র-সমর্থকদের একটা নিউক্লিয়াস দল তৈরি করে, যেখানে মেধাবী চিন্তাশীল আদর্শবাদী ছাত্রদের চেয়েও হাত-পা চালাতে পারে, ট্রিগারে আঙুল টিপতে ভয় পায় না—এ রকম ছাত্রের দরকার হয়। আধিপত্যসংশ্লিষ্ট অর্থকরী দিকটির সামাল দিতে এসব ছাত্রের দরকার হয় রাজনৈতিক দলগুলোর। সে জন্য তারা ছাত্রদের আশকারা দেয়। অর্থাৎ ছাত্রদের মেধাবলের চেয়েও পেশিবলের কার্যকারিতা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বেশি আকাঙ্ক্ষিত হয়। অর্থাৎ আদর্শবাদী অংশটি ক্রমশ হতাশায় ডোবে, আর পেশিবাদী অংশটুকু ক্ষমতায় এবং টাকায় ফুলেফেঁপে উঠে উপাচার্য়ের দপ্তরে বসে অঘোষিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সেখানে উপাচার্য হয়ে পড়েন ঠুঁটো জগন্নাথ।
এখন প্রশ্ন উঠবে, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর এ পেশিসংশ্লিষ্ট নির্ভরতা? লক্ষ করলে দেখা যায়, উঠতি ২০ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে পেশিশক্তিসংবলিত যুবশ্রেণীর সবচেয়ে সহজপ্রাপ্যতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন। যুবায়েরের বাবার কথার সূত্র টেনে বলি, তিনি ছেলেকে নিজের খরচায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন ছেলে মানুষ হবে বলে, কিন্তু ছেলে ফিরল লাশ হয়ে এমন একটি কারণে, যার সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কোথাও বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই। অন্যদিকে আর কোনো ক্ষেত্র থেকে, যেমন—শ্রমজীবী ক্ষেত্র থেকে—এভাবে অবারিত পেশিসংবলিত যুবশক্তির আমদানি নিশ্চিত করা যায় না। যুবচরিত্রের অন্তর্লীন একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো, আর ঠিক এরই ফায়দা পায় রাজনৈতিক দলগুলো। বাবা-মা বা অভিভাবক পয়সার জোগান দিচ্ছেন আর ছেলে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদিক থেকে ফিডার লাইনের কাজ করে। অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চাপ খুব হালকা থেকে নেই বললেই চলে, ফলে বিস্তর সময় থাকে ছাত্রদের নানাভাবে সময় কাটানোর। দলীয় রাজনীতির প্রভাবে সন্ত্রাসপ্রধান রাজনীতি যখন প্রবল হয়ে ওঠে, তখন ক্যাম্পাসের হলগুলো পরিণত হয় একেকটা দুর্গে। লড়াই হয় এবং লাশ পড়ার রাজনীতিতে ক্রন্দসিত হয় ক্যাম্পাস। কিন্তু এই লাশ পড়াটাই সন্ত্রাসবাদী দলীয় রাজনীতির আদর্শের তলে তলে চাপা অভীপ্সা। কথাটা নিষ্ঠুর শোনালেও সত্য।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল আদর্শ যেমন জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞান বিতরণের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে শিক্ষকসমাজ হতাশাব্যঞ্জক একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনার আলোকে তারা অনেক সময় ছাত্রসমাজকে বিপথে পরিচালিত যে করে তার নিশ্চয় উদাহরণ পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় তারা ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকার মতো কর্মসূচি নেয়, যা কোনোভাবেই দেশ-গঠনমূলক কর্মসূচি হতে পারে না। মেধার ভিত্তিতে না হয়ে দলীয় ভিত্তিতে শিক্ষকদের চাকরি পাওয়ার ঘটনা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে গেছে। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পতন উন্মুখ অবস্থার পেছনে দলীয় রাজনৈতিকমনস্ক শিক্ষকসমাজের কোনো কোনো অংশ দায়ী।
সবশেষে আরেকটি ব্যাপারও আলোচনায় আনতে হবে। যেসব ছাত্র রাজনৈতিক সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে, তারা কিন্তু অবুঝ শিশু নয়। বয়স অনুযায়ী তাদেরও একটি লক্ষ্য থাকে; সেটি হচ্ছে, আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। স্নাতকোত্তর পাস করে ধীরে ধীরে পেশাগত জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেয়ে তরুণ বয়সেই যদি পেশির জোরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে আধিপত্য বজায় রাখায় কুশলী হওয়া যায় এবং টু-পাইস হয়, তা হলে তার দিকে হঠকারিতা পছন্দকারী যুবসমাজ ঝুঁকবেই। এমনও হতে পারে, সন্ত্রাসের মাধ্যমে টাকা উপার্জনকারী একজন ছাত্রের প্রতি তার অভিভাবক শ্রেণীও ক্রমশ সদয় হয়ে উঠতে পারে, কিংবা মৌন সম্মতি দিতে পারে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য-বুভুক্ষু পরিবারগুলোতে যুবক সস্তানের ওপর এ ধরনের চাহিদা তৈরিও হতে পারে।
তার পরও বলব, বেশির ভাগ ছাত্রই শিষ্টাচারী এবং আইনানুগ এবং বেশির ভাগ শিক্ষকই বিবেকসম্পন্ন ও জ্ঞানাচারী, কিন্তু সংকটটা তৈরি হচ্ছে সে গভীরে প্রোথিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে, যেখানে মনে করা হচ্ছে যে মেধা নয়, যুক্তি নয়, শিক্ষা নয়, পেশিই হচ্ছে আসল নিয়ন্তা। রাজনৈতিক সন্ত্রাসে জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ তাই-ই প্রমাণ করে। এখানে বউয়ে ভাঙলে সাত আসমানের পতন এবং ঝিয়ে ভাঙলে সাত খুন মাফ নীতিই অনুসৃত হয়।
মোহীত উল আলম: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মানববিদ্যা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস।

No comments

Powered by Blogger.