ইফতারও জুটছে না তাদের

ফাদুমা আদেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। গত সোমবার রমজান মাসের প্রথম দিন রোজা রেখেছেন সোমালিয়ার এ নারী। কিন্তু সন্ধ্যায় ইফতার করার জন্যতিনি কোনো খাবার পাননি। শুধু তিনি নন, এ বছর সোমালিয়ার বেশির ভাগ মানুষেরই অবস্থা তাঁর মতো।
নিজের দেশ সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষের কারণে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ফাদুমা আদেন। তিন সন্তানের এ জননী বলেন, ‘রোজা রাখাটা আমার জন্য কষ্টের। তবু আল্লাহর ভয়ে রোজা রেখেছি।’
খরার কারণে হর্ন অব আফ্রিকার দেশগুলোতে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। উপদ্রুত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কেনিয়া, ইথিওপিয়া, জিবুতি ও সোমালিয়া।
এ অঞ্চলের প্রায় এক কোটি মানুষ খরাকবলিত। দক্ষিণ সোমালিয়ার দুটি এলাকাকে দুর্ভিক্ষকবলিত ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ওই এলাকার ৩০ শতাংশ শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। প্রতিদিন প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে চারটি শিশু মারা যাচ্ছে।
ইফতার করার মতো খাবার নেই আরেক শরণার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহরও। তাঁর প্রশ্ন, ‘ইফতার করার মতো কিছুই যখন নেই, তখন আমি কীভাবে রোজা রাখব?’ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই ক্ষুধার্ত। তাঁদের মুখে তুলে দেওয়ার মতো কিছুই নেই।’ স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে নিজেকে অপরাধী মনে করছেন তিনি।
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন আরেক উদ্বাস্তু নুর আহমেদ। ছয় সন্তানের এই জনক বলেছেন, ‘সেহির-ইফতার করার মতো কিছু না থাকায় রোজা রাখতে পারছি না।’
মোগাদিসুর একটি মসজিদের ইমাম উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এটা উদ্বেগের বিষয় যে সোমালিয়ার অনেক মানুষ রোজা রাখতে পারছেন না। কারণ, ক্ষুধার কারণে তাঁরা এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ইফতার করার মতো খাবার নেই তাঁদের কাছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষুধায় যারা মারা যাচ্ছে, তাদের সাহায্যার্থে আমরা সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে মুসলমানদের নীরব থাকা উচিত নয়।’
কেনিয়ার দাবাব শহরের শরণার্থী শিবিরে রেড ক্রস পরিচালনা করছে একটি হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের চিকিৎসক মুহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আপনি নিজে ক্ষুধার্ত থাকলে আপনার মধ্যে সহানুভূতির জন্ম হবে। আপনি নিজে ক্ষুধার্ত হলে আরেকজন ক্ষুধার্তের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, লোকজন হাঁটার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে।
জাতিসংঘ বলেছে, সোমালিয়ায় এক কোটি ১০ লাখেরও বেশি লোকের খাদ্যসাহায্য দরকার। এক হিসেবে দেখা গেছে, খাদ্যের সন্ধানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৩০০ সোমালীয় দেশ ছাড়ছে।

No comments

Powered by Blogger.