নতুন শুরুর যাত্রা

‘কিসের হ্যাটট্রিক?’—হ্যাটট্রিকের কথা শুনেই যেন আকাশ থেকে পড়লেন তামিম ইকবাল। অস্বাভাবিক অবশ্য নয়। বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে, ১৪ মাস আগে। চট করে বাংলাদেশ ওপেনারের কীভাবে মনে পড়বে, টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি!
অতি ভোজনে নাকি দারুণ সুস্বাদু খাবারেও অরুচি চলে আসে। অতিরিক্ত ক্রিকেটের কারণে শীর্ষ ক্রিকেটারদের বিরক্তি অনেক সময়ই খবরের শিরোনাম হয়েছে। বাংলাদেশের উল্টো। ওয়ানডে নিয়ে সমস্যা নেই, কিন্তু টেস্ট খেলার জন্য মাঝেমধ্যেই দেখা যায় হাহাকার। এর আগেও একবার ১৩ মাসের বিরতির ফাঁদে পড়েছিল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট। ২০০৬ সালে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্মরণীয় সেই সিরিজের পর আবার টেস্ট খেলতে পেরেছিল ২০০৭ সালের মে মাসে। এবারের বিরতি তো ছাড়িয়ে গেল সেটিকেও। আজ সকালেই জিম্বাবুয়ের উদ্দেশে কাতার এয়ারওয়েজে চাপবে বাংলাদেশ দল। এটিকে তাই বলা, একরকম নতুন শুরুর যাত্রা!
তামিমের সমস্যা তো আরও বেশি। কাউন্টি খেলে ইংল্যান্ড থেকে দেশে আসার পর কুঁচকির চোটের কারণে ব্যাটই হাতে নিতে পারেননি। বাড়তি সতর্কতার জন্য জিম্বাবুয়ে সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটা না-ও খেলতে পারেন। হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির অভিযানে নামতে হবে তাই অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে। উইজডেনের বর্ষসেরা তাকিয়ে ভাগ্যের দিকে, ‘আল্লাহ ভরসা...প্রস্তুতি আমার একদম ভালো হয়নি। তার পরও আশাবাদী। উইকেটে খানিকটা সময় কাটালেই হয়তো জড়তা কেটে যাবে। আশা করি প্রস্তুতির স্বল্পতা খুব বেশি ভোগাবে না।’
ইংল্যান্ড সিরিজটা আবার খুব ভালো মনে আছে জুনায়েদ সিদ্দিকের। কিন্তু এই দীর্ঘ বিরতি খানিকটা অনিশ্চয়তায় ফেলেছে তাঁকেও। বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স ছিল না তাঁর (৬ ও ১), কিন্তু ঠিক আগের ম্যাচেই লর্ডসে করেছিলেন জোড়া ফিফটি (৫৮ ও ৭৪)। তার আগের সিরিজে ওই দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই পেয়েছিলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। হারারে টেস্টে তাই ‘অটোমেটিক চয়েস’-ই হওয়ার কথা ছিল এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের। কিন্তু ১৬ মাসের বিরতি যে মুছে দিয়েছে অনেক কিছুই! জুনায়েদের কণ্ঠেও তাই অনিশ্চয়তা, ‘জানি না একাদশে থাকব কি না। আমি বেশি কিছু ভাবছি না, ভাবলে আমার জন্য আরও খারাপ হয়। তবে সুযোগ পেলে লর্ডসের চেয়েও ভালো কিছু করতে পারব বলে আশা রাখি।’
নিজের মতো দলকে নিয়েও আশাবাদী জুনায়েদ, ‘জিম্বাবুয়েতে একটাই টেস্ট, দেখার বা বোঝার সুযোগ নেই। ডু অর ডাই ম্যাচ। আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। অনুশীলন খুব ভালো হয়েছে। জিম্বাবুয়ের কন্ডিশনের সঙ্গে যদি দ্রুত মানিয়ে নিতে পারি, ভালো না করার কোনো কারণ দেখছি না।’
অনুশীলনে বাংলাদেশের পেসারদের দেখে দারুণ খুশি কোচ স্টুয়ার্ট ল। অথচ কাগজে-কলমে পেস বোলিংটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ! টেস্টে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের মূল পেসার শাহাদাত হোসেন নেই চোটের কারণে। এখনো টেস্ট দলে থিতু না হওয়া শফিউল ইসলামকেই হয়তো নেতৃত্ব দিতে হবে পেস আক্রমণের। বগুড়ার তরুণ আশাবাদী, ওয়ানডের পারফরম্যান্স বয়ে আনতে পারবেন টেস্টেও, ‘আমি কিন্তু ধারাবাহিকভাবে টেস্ট খেলার সুযোগ পাইনি। টানা দুটো টেস্ট তো বোধ হয় কখনোই খেলা হয়নি। এ জন্যই টেস্টের পারফরম্যান্স এতটা ভালো নয়। এবার অবশ্য একটাই টেস্ট, চেষ্টা করব ভালো কিছু করতে। শুনছি জিম্বাবুয়ের উইকেটে পেসারদের জন্য সাহায্য থাকবে। সেটা হলে তো ভালোই। আশা আছে ওয়ানডের মতো টেস্ট দলেও জায়গাটা পাকা করার।’
ছোট ছোট ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলো যদি এক সুতোয় গাঁথা হয়ে যায়, দিন শেষে লাভ দলেরই। আজ সেই আশায় ভর করেই জিম্বাবুয়ে যাচ্ছে সাকিব আল হাসানের দল।

No comments

Powered by Blogger.