পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলে অনিশ্চয়তা নেই

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনে অনিশ্চয়তার কোনো অবকাশ নেই।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফায়েকুজ্জামান গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
একটি ওয়েবভিত্তিক সংবাদ সংস্থা গত শনিবার ‘পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনে অনিশ্চয়তা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজারের গতকালের বড় ধরনের দরপতনের পেছনে এ খবরটির একটি ভূমিকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রস্তাবিত তহবিলটির মূল উদ্যোক্তা হিসেবে আইসিবির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফায়েকুজ্জামান বলেন, ‘ফান্ড গঠনের অনিশ্চতার যে খবরটি বাজারে ছিল, তা আদৌ সঠিক নয়। এটা বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ তিনি বলেন, ফান্ডটি গঠনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
ফায়েকুজ্জামান জানান, ৯ মার্চ আইসিবির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ফান্ডটি অনুমোদন করা হয়েছে, যা সহ-উদ্যোক্তাদের ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সহ-উদ্যোক্তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সম্মতির পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) পাঠানো হবে। এসইসির অনুমোদনের পরপরই ফান্ডটি বাজারে আসবে।
তহবিলটি কার্যকর হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ না করে আইসিবির এমডি বলেন, সব আইনি ধাপ সম্পন্ন করে যত দূর সম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে এটি বাজারে নিয়ে আসা হবে।’
ফায়েকুজ্জামান আরও বলেন, সহ-উদ্যোক্তাদের অনেকেই আইসিবির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তাঁরা সবাই ফান্ডটি গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। সুতরাং এ বিষয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই।
আইসিবির এমডি বলেন, ‘আমরা ফান্ডটি উন্মুক্ত রেখেছি যাতে পরবর্তী সময়ে এখানে যে কেউ আসতে পারে।’
তহবিলটির মূল উদ্যোক্তা আইসিবি। সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে সরকারি চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক (সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা), জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।
তবে বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চাইলে এ তহবিলে অংশ নিতে পারবে। এসইসির অনুমোদন পাওয়ার পরই এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে তহবিলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হবে। এরই মধ্যে বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি তহবিলটিতে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাজার পরিস্থিতি: এক দিন আগেও যেখানে বিক্রেতাশূন্য ছিল, সেখানে গতকাল ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে দেশের শেয়ারবাজার। এতে একপর্যায়ে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের লেনদেন এক রকম বন্ধ হয়ে যায়।
টানা ছয় দিন ধরে বাড়ার পর গতকাল দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৪৫৯ পয়েন্ট বা প্রায় ৭ শতাংশ কমে ছয় হাজার ১৭৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক এক হাজার ৩০০ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ৩৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিন অব্যাহতভাবে দর বাড়ার কারণে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে এমনিতেই মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা ছিল। এতে অন্য দিনগুলোর চেয়ে বাজারে কিছুটা বিক্রির চাপ বেশি থাকা স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশ ফান্ড গঠনের অনিশ্চয়তার খবরটি দরপতনকে ত্বরান্বিত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.