নির্দেশক মূল্যের সীমারেখা থাকবে

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে এ পদ্ধতিতে বাজারে আসা কোনো কোম্পানির শেয়ারের নির্দেশক মূল্য নির্ধারণের জন্য শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত এবং শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদ-মূল্য (এনএভি) বিবেচনায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিই ১৫ অথবা এনএভির পাঁচ গুণ—এ দুইয়ের মধ্যে যেটি কম, নির্দেশক মূল্য তার বেশি হতে পারবে না।
আবার এর পরিমাণ শেয়ারপ্রতি এনএভির কমও প্রস্তাব করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে পিই গণনা করতে হবে কোম্পানির পূর্ববর্তী তিন বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে উল্লিখিত শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসের গড়ের ভিত্তিতে।
যেমন, ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু) কোনো কোম্পানির ইপিএস পাঁচ টাকা হলে বেঁধে দেওয়া পিই অনুযায়ী সর্বোচ্চ নির্দেশক দাম হতে পারবে ৭৫ টাকা। আর এনএনভি ২০ টাকা হলে নির্দেশক দাম ১০০ টাকা হতে পারবে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত দাম ৭৫ টাকার মধ্যেই থাকতে হবে। কেননা পিই অনুযায়ী নির্দেশক দাম এনএভি অনুযায়ী নির্দেশক দামের চেয়ে কম। একই সঙ্গে তা ২০ টাকার নিচেও নামতে পারবে না। কেননা, এখানে এনএভি হলো ২০ টাকা।
বর্তমান নিয়মে নির্দেশক মূল্যের জন্য কোনো ধরনের সীমারেখা টানা নেই।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সম্প্রতি বুক বিল্ডিং আইনের সংশোধনের সুপারিশের খসড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রেরণ করেছে।
দেশের শেয়ারবাজারে ধসের পর বুক বিল্ডিং পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগ করা হয়, এ পদ্ধতির অপব্যবহারের মাধ্যমে অনেক কোম্পানি মৌলভিত্তির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। তাই কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে আসার আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পড়ছেন আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে।
এ অবস্থায় গত ২০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি স্থগিত করে আইনে সংশোধনীর খসড়া তৈরি করে এসইসি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
সংশোধনীর খসড়ায় আইপিওতে আসতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর এসইসির কাছে জমা দেওয়া নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে। কোম্পানির সঙ্গে কোনো ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নেই, এমন ব্যক্তিরাই কেবল কমিটির সদস্য হতে পারবেন। এসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান কমিটিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকবেন।
বর্তমানে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিপরীতে বরাদ্দ করা শেয়ার লেনদেন শুরুর ১৫ দিন পর্যন্ত বিক্রি বা হস্তান্তর নিষিদ্ধ (লকইন) থাকে। এ সময় বাড়িয়ে ৬০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া চূড়ান্ত দরপত্রের পর আইপিওর চাঁদা গ্রহণ (সাবস্ক্রিপশন) ২৫ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিনের মধ্যে শুরু করতে হবে। দরপত্রের সময় ৭২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টা করার কথা বলা হয়েছে। আর দরপত্র গ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোম্পানি ও ইস্যু ব্যবস্থাপককে আইপিওর জন্য শেয়ারের প্রস্তাবিত মূল্যসহ (কাট অব প্রাইস) চূড়ান্ত খসড়া প্রসপেক্টাস এসইসিতে জমা দিতে হবে।
এর আগে মুদ্রিত প্রাথমিক খসড়া প্রসপেক্টাস মনোনীত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সমিতির কাছে রোড শো আয়োজনের অন্তত পাঁচদিন পূর্বে প্রেরণ করতে হবে। এতে শেয়ারের নির্দেশক মূল্য উল্লেখ করা যাবে না।
যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে খসড়া প্রসপেক্টাস পাঠাতে হবে সেগুলো হলো: মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, ডিএসই, সিএসই, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) ও বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন।
নির্দেশক মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, কোম্পানিটির কোনো সহযোগী বা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অথবা পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.