একটু ভাগ্যের ছোঁয়াও লাগবে

বিশ্বকাপটা তাহলে শুরুই হয়ে যাচ্ছে! এত দিন ক্রিকেট মহাযজ্ঞের আমেজ শুধু আমরা নিজেরাই টের পাচ্ছিলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মনে করিয়ে দিল, বিশ্বকাপটা পুরো ক্রিকেট-বিশ্বকেই মিলিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপের সব অধিনায়কের সঙ্গে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটালাম। মাঠে নামার আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে মিনিট চল্লিশেক ভালোই আড্ডা জমল। অনেক মজার মজার কথা হয়েছে, কলামে সবকিছু লেখাও যায় না। তবে আড্ডা থেকে একটা জিনিস শিখেছি—বিয়ে করলে মানুষ ‘জওয়ান’ হয়ে যায়!
হাসবেন না, কথাটা পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির। আড্ডায় ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির বিয়ের প্রসঙ্গ উঠল। প্রথম দেখা কোথায়, প্রেম কীভাবে হলো, বিয়ে হলো কীভাবে—সবই বলেছে ধোনি। তখনই আফ্রিদি বলল, বিয়ে করলে নাকি মানুষ আরও ‘জওয়ান’ হয়ে যায়! আফ্রিদি ধোনিকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘তোমার বয়স কত...৩৪?’ ধোনি মানল না, ওর বয়স নাকি ২৯। আফ্রিদির পাল্টা জবাব, ‘আমার বয়সের মতো বলো না। আসলটা বলো।’ ধোনির ওই এক কথা, তার বয়স একটাই।
সুরেশ রায়নার টিম বাস মিস করার প্রসঙ্গটা উঠল। ৬টা ৪০ মিনিটে বাস ছিল, সময়টা এগিয়ে দেওয়াতেই নাকি সমস্যার সূত্রপাত! এটা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অনেক কথা হচ্ছে দেখে ধোনি আমাকে জিজ্ঞেস করল, বাংলাদেশের মিডিয়াও কি এমন? আমি বলেছি, ‘হ্যাঁ। বাংলাদেশ তো ইন্ডিয়াকে সবকিছুতেই ফলো করে, এ কারণে একই রকম। হা হা হা।’ আড্ডার এক ফাঁকে দেখলাম রিকি পন্টিং আফ্রিদিকে আমার ব্যাপারে কী একটা জিজ্ঞেস করছে। তবে সেভাবে খেয়াল করতে পারিনি কী বলেছে।
অধিনায়কদের সঙ্গে আড্ডার স্মৃতি অনেক দিন মনে থাকবে। তবে যেটা কোনো দিনই ভুলব না, সেটা হলো রিকশায় চড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের যাওয়া। এটা আসলেই অন্য রকম একটা ব্যাপার। আমার রিকশাটা মাঠে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই যে রকম চিৎ কার করে উঠল, বলে বোঝাতে পারব না কেমন লাগছিল তখন। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম খুব, চোখে পানি আসাটা কোনো রকমে আটকেছি। জীবনে হয়তো এমন অভিজ্ঞতা আর হবে না। হ্যাঁ, এর চেয়ে বেশি কিছু হবে, যদি কোনো দিন বিশ্বকাপ জিতি।
অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলনে ধোনি রসিকতা করে বলেছে, শুধু ভারত কেন, বাংলাদেশও বিশ্বকাপ জেতার কথা ভাবতে পারে। খারাপ বলেনি ও। ভাবনায় তো আর কারও শেকল পরানো নেই! তবে আপাতত ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোই লক্ষ্য এবং প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচটা।
এ ম্যাচে জিততে হলে আমাদের ভাগ্যেরও একটু সহায়তা দরকার। হতে পারে আমাদের পক্ষে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চলে এল, যদিও এবার রেফারেল পদ্ধতি আছে। কিংবা একটা সে রকম ক্যাচ, যেটা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। প্রথম বলে শেবাগ কিংবা শচীনের উইকেটও হতে পারে। মোট কথা, একটা ধাক্কা লাগাতে হবে ম্যাচে।
বিশ্বকাপে এবারই প্রথম থাকবে রেফারেল পদ্ধতি। আমরা ঠিক করেছি, এক শ ভাগ নিশ্চিত না হয়ে রেফারেল চাইব না। বল করার পর যদি মনে হয় ওটা মিডল স্টাম্পেই লাগত, তাহলে রেফারেল চাইব, আর না হলে চাইব না। দলের সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই পদ্ধতিটা কেমন। এক শ ভাগ নিশ্চিত না হয়ে শুধু শুধু সুযোগ নষ্ট করার দরকার নেই। তা ছাড়া এটা নিয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটো রেফারেল চেয়ে দুটোই ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। আমার আউটটা নিয়ে তো রেফারেল চাইলামই না। ভেবেছি ব্যাটের কানায় তো লেগেছে, আউট। ক্যাচ যে মিস হবে ওটা কে জানত!
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নিয়ে অনেক আলোচনা শুনছি। সত্যি কথা বলতে কি, এটা নিয়ে আমাদের কোনো টেনশন নেই। অন্যান্য কাজ ঠিকভাবে করতে পারলে পাওয়ার প্লেও ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।
ভালো কথা, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তো ভারত নিয়েই কিছু বললাম না! কিছু বলারও তো নেই। আমরা আমাদের খেলা নিয়েই ভাবছি। ভারত নিয়ে যদি কিছু বলতেই হয়, বলব শচীন টেন্ডুলকারের কথা। বিশ্বকাপের এই ম্যাচটাই হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর শেষ ম্যাচ। আমার তাই একটাই চাওয়া, শেষ ম্যাচে প্রথম বলেই যেন আউট হয়ে যায় টেন্ডুলকার।

No comments

Powered by Blogger.