মিসরে মোবারক আমলের তিন মন্ত্রী গ্রেপ্তার

মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির অভিযোগে হোসনি মোবারক আমলের সাবেক তিন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত মন্ত্রীরা হলেন—মোবারক সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব এল-আদলি, সাবেক গৃহায়ণমন্ত্রী আহমেদ মাগরাবি ও সাবেক পর্যটনমন্ত্রী জুহেইর গারানা। এ ছাড়া মোবারকের দলের প্রভাবশালী নেতা ও মিসরের ইস্পাত ব্যবসায়ী আহমেদ এজকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির উচ্চ সামরিক পর্ষদের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগেই এ চার প্রভাবশালী ব্যক্তির বিদেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারকৃতরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে হোসনি মোবারকের পতনের এক সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার গণতন্ত্রপন্থীরা দেশজুড়ে বিজয় উৎ সব পালন করেছে। এ সময় রাজধানী কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া ও শারম আল-শেখসহ দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ ও বিজয় মিছিল বের করা হবে। এতে লাখ লাখ লোক অংশ দেয়। এসব মিছিল সমাবেশ থেকে সামরিক প্রশাসনের হাত থেকে দেশের ক্ষমতা বেসামরিক প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মিসরের প্রায় এক ডজন সাবেক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরকার তদন্ত করছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব এল-আদলি মোবারকবিরোধী বিক্ষোভের সময় আন্দোলনকারীদের সহিংস দমনে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মোবারক আমলের এই চার প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার চলমান বিক্ষোভ প্রশমন করতে চাইছে।
এদিকে হোসনি মোবারকের পতনের এক সপ্তাহ উপলক্ষে গণতন্ত্রপন্থীরা গতকাল দেশজুড়ে বিজয় উৎ সব পালন করেছে। গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দল ও যুব সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য আহমেদ নাগিব জানিয়েছেন, তাঁদের বিজয় উৎ সব গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়। গতকাল কায়রোর তাহরির স্কয়ারে জুমার নামাজ পড়ান শেখ কারাদাউয়ি। এতে লাখ লাখ লোক অংশ নেয়। জুমার নামাজের খুতবা আল-জাজিরা টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। খুতবায় তিনি বলেন, মোবারকমুক্ত এ দিনটি আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে।
গণতন্ত্রপন্থী নেতারা আশা করছেন, সপ্তাহব্যাপী তাঁদের বিজয় মিছিলে লাখ লাখ লোক অংশ নেবে এবং সামরিক কাউন্সিলের হাত থেকে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি ত্বরান্বিত করবে।
মোবারক পদত্যাগ করলেও মিসরের জীবনযাত্রা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। কায়রোর তাহরির স্কয়ারের জনতার পাশাপাশি এখনো আছে সেনাবাহিনীর ট্যাংক। সরকারি কর্মচারীরা ধর্মঘট করছেন। ব্যাংক-বিমা, স্কুল-কলেজ এখনো বন্ধ।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের জরুরি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যপ্রধানমন্ত্রীআহমেদ শফিক আগামীকাল অথবা পরশু নতুন কিছু মন্ত্রীনিয়োগের ঘোষণা দেবেন। জনগণ যেন রাজপথ ছেড়ে কাজকর্মে ফিরে যান, সে উদ্দেশ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
শারম-আল শেখে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরস্পরবিরোধীখবর শোনা যাচ্ছে। খবরে বলা হয়, তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি ঘটছে। তবে তিনি কিছুতেই দেশত্যাগ করতে রাজি নন।

No comments

Powered by Blogger.