রমজানের বাজারদর সহনীয় মনে করছে এফবিসিসিআই

দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষসংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ বলেছেন, চলতি রমজান মাসে বেশির ভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও ভোক্তাদের কাছে সহনীয় পর্যায়ে ছিল।
তবে এফবিসিসিআই ও সরকারের প্রত্যাশার জায়গায় দু-একটি ব্যত্যয় ঘটেছে উল্লেখ করে এ কে আজাদ আরও বলেন, যারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে, তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী কথার বরখেলাপ করেছে। এফবিসিসিআই এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে কয়েকটি ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য কয়েকজন ব্যবসায়ী দায়ী বলে জানানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তেও এর সততা পাওয়া গেছে।
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, চূড়ান্ত তদন্তে ওই ব্যবসায়ীরা দোষী প্রমাণিত হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মো. জসিমউদ্দিন, পরিচালক মো. হেলালউদ্দিন ও বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হাবিব। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের গোলাম মোস্তফা তালুকদার, মো. জালালউদ্দিন আহমেদ ইয়ামীন, খন্দকার রুহুল আমীন, শামসুল হক, নাগিবুল ইসলাম, মো. আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, রমজানের আগেই সরকার থেকে চিনি ও ভোজ্যতেলের মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে। কী কারণে এটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও এফবিসিসিআইয়ের একজন পরিচালকসহ মোট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি মিল মালিক, পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে যাদের দায়ী বলে শনাক্ত করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ কে আজাদ আরও বলেন, ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যসচিবকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে ‘ডিও মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৫ দিন ও তা হস্তান্তরযোগ্য নয়’ করতে হবে। তাহলে কোন পক্ষের কারণে দাম বাড়ছে তা জানা যাবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি পণ্যসামগ্রীর হালনাগাদ চাহিদা ও সরবরাহের চিত্র জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি তথ্যভাণ্ডার স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
বাণিজ্যসচিব বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভোজ্যতেল ও চিনির মজুদ রয়েছে। তাই এসবের সরবরাহ সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধ মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টন সয়াবিন ও পাম তেল রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় দেড় লাখ টন চিনির মজুদ রয়েছে।
পুনর্গঠন না করলে টিসিবিকে দিয়ে রাতারাতি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, উল্লেখ করে বাণিজ্যসচিব টিসিবিকে পুনর্গঠন করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানান।
সচিব আরও বলেন, কয়েকটি পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার সংবাদে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ তদারকি দল পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোথাও অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়টি লক্ষ করা যায়নি।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হাবিব বলেন, দেশের পাঁচটি চিনিকলের স্বার্থরক্ষায় পরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর প্রতিটনে দুই হাজার টাকা শুল্ক বসানো হয়েছে। এ শুল্ক তুলে নিলে অনেকেই চিনি আমদানি করত। এতে দেশে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে চিনির দাম কমে গেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারে চিনির দর আবার কমে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.