পাকিস্তানে বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫

পাকিস্তানের লাহোরে গত বুধবার শিয়া সম্প্রদায়ের এক শোক শোভাযাত্রায় তিন দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫-এ পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫০ জন। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। ভয়াবহ বন্যাকবলিত পাকিস্তানে এই ঘটনা সরকারকে আরও বেকায়দায় ফেলেছে। বন্যা শুরু হওয়ার পর এটাই পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় ধরনের বোমা হামলা।
স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাজ্জাদ ভুট্টা বলেন, বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫০ জন। গতকাল কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের জানাজার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, গতকাল লাহোরের দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেশির ভাগ সড়ক ছিল ফাঁকা। সরকারিভাবে শোক ঘোষণার কারণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বোমা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। এতে বলা হয়, শিয়া চরমপন্থীরা ২০০৯ সালে সিন্ধু প্রদেশে মাওলানা আলি শাইর হায়দরিকে হত্যা করে। এই হামলা তারই প্রতিশোধ। মাওলানা আলি শাইর হায়দরি একজন শিয়াবিরোধী নেতা ছিলেন।
হজরত আলী (রা.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের ৩৫ হাজার সদস্য বুধবার লাহোরের রাজপথে বার্ষিক শোক শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার তিনটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রথম বোমাটি ছিল একটি সময়নিয়ন্ত্রিত বোমা। লাহোরের সুপরিচিত একটি ভবনের কাছে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। এর কয়েক মিনিট পর এক কিশোর আত্মঘাতী হামলাকারী শোভাযাত্রায় আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। খানিক পর শোভাযাত্রার শেষপ্রান্তে অপর আত্মঘাতী হামলাকারী তৃতীয় বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিস্ফোরণের পর শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া শিয়াদের একটি অংশ স্থানীয় একটি থানায় আগুন লাগায়। পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় শোকার্ত লোকজন পুলিশ ও প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
শীর্ষস্থানীয় শিয়া নেতা আগা সৈয়দ হামিদ আলি শাহ মুসাভি কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা বার্ষিক এই শোভাযাত্রার আয়োজন কখনো বন্ধ করবেন না।
পাকিস্তানে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা অনেক দিন ধরে চলে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্নি চরমপন্থীরা শিয়া ও অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর কয়েক ডজন হামলা চালিয়েছে। আল-কায়েদা ও তালেবানের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এ ধরনের হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে তারা।

No comments

Powered by Blogger.