ভালোবাসা -মানুষ অমৃতেরই সন্তান

ভালোবাসার স্পর্শে পাথর-রাজকন্যার দেহে প্রাণ জাগে। ব্যাঙ-রাজকুমার সুদর্শন যুবক হয়ে যায়। প্রেমিক ফরহাদ তার শিরির জন্য পাহাড় কেটে নহর বানায়। আর রিকশাচালক নুরুল আবছার বাকহীন তরুণী হাছিনা বেগমের মুখে ফোটায় ভাষা। সত্যিকার ভালোবাসা জাদুর মতো, তা অসম্ভবকে সম্ভব করে, আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানুষ অমৃতেরই সন্তান।
রোববারের প্রথম আলোয় এই ‘জাদুকরি’ ঘটনা সংবাদ হয়েছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক গণভোজে দেখা হয় দুজনের। হাছিনার নির্বাক চাউনি আর ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটায় কী এক টান বোধ করেন রিকশাচালক আবছার! বোবা মেয়েটির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলে যান সেই সব কথা, প্রেমিকাকে দেখে যা প্রেমিকের মনে আসে। সেই আকর্ষণ থেকে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে, বিয়ে থেকে কোল আলো করে আসা শিশু পর্যন্ত ঘটতে থাকে প্রেমের এক আধুনিক রূপকথা। বিয়ের পর স্ত্রীর কাপড়চোপড় পরিষ্কার থেকে শুরু করে তাঁর খাওয়াদাওয়া—সব করেছেন আবছার। ভালোবাসা আর যত্নে হাছিনা এখন কথা বলা শিখছেন, শিখছেন সাবলীলভাবে হাঁটতে। এখন রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যাবেলায় ফিরে অষ্টম শ্রেণী পাস আবছার তাঁর নিরক্ষর স্ত্রীকে অ আ ক খ শেখান।
মানুষের ক্ষমতা আসলে ভালোবাসারই ক্ষমতা। যেদিন এই ক্ষমতা থাকবে না, সেদিন মানুষ আর মানুষ থাকবে না। বিজ্ঞান বলে, প্রেম আর কিছু নয়, মস্তিষ্কের এক ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া। কবি বলেন, মনের লীলাই প্রেম। কিন্তু আবছারের ভালোবাসায় হাছিনার মস্তিষ্কে কী রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটেছে, কিংবা কোন লীলায় জেগেছে তাঁর মন, তা আমরা জানি না। কিন্তু ভালোবাসা যে বাস্তব পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এর প্রমাণ তো হাছিনার কথা বলায়, হাঁটতে পারায়! নুরুল আবছার দুর্বল ও দরিদ্র নন, তিনি একজন শক্তিমান ও মানবিক মানুষ। হাছিনা বা আবছারদের জীবনে ঘটা ভালোবাসার দিবস আসে না, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা আসে। সেই ভালোবাসা না থাকলে মেকি রংদার আয়োজনে যতই চলুক ভালোবাসার মহড়া, ভালোবাসাবাসির জাদুকরি ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে মানুষ।
আর কিছু নয়, মানুষই যে পারে মানুষকে সুখী করতে, সার্থক করতে, হাছিনা ও আবছারের জীবন তার প্রমাণ।

No comments

Powered by Blogger.