নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে -মা এখন অভিভাবক

একটি শিশুর জন্ম, প্রতিপালনসহ সব ক্ষেত্রেই মায়ের ভূমিকা মুখ্য হলেও রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন আর সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে আমাদের সমাজে মায়ের অবস্থান এখনো প্রান্তিক। মা তথা নারীর প্রান্তিক এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথে বড় ধরনের অগ্রগতির খবর পাওয়া গেল সরকারের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্তে: ‘অভিভাবক হিসেবে শুধু মায়ের নাম দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করার পক্ষে মত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’ একটি সন্তানের মা-বাবা হিসেবে দুজনই একই মর্যাদায় অভিভাবকত্ব পাওয়ার দাবিদার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামোয় এ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে বড় ধরনের অগ্রগতি বলেই আমরা মনে করি।
শুধু মায়ের নাম ব্যবহার করলে ফরম অপূর্ণ বিবেচিত হবে কেন জানতে চেয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত। এর ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মায়ের অভিভাবকত্ব নিশ্চিত হলো। কিন্তু জীবনের অন্য ক্ষেত্রে? হাইকোর্ট এই রুল জারির সময় পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কেবল এসএসসি বা এইচএসসির কথা না বলে সব পর্যায়ের শিক্ষা ও চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে এই দাবি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার শুধু এসএসসি ও এইচএসসির কথাই ঘোষণায় বলেছে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত হবে, শিক্ষা ও চাকরিসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে বাবার সমান্তরালে অভিভাবক হিসেবে মায়ের অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করা।
মা ও নারীদের ব্যাপারে নানা নীতিবাক্য সমাজে প্রচলিত থাকলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এখনো মায়ের অধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর মূল কারণ সমাজে মেয়েশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। আজকের মেয়েশিশুই আগামীকালের মা। সুতরাং তার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ প্রত্যাশিত। পরিবার থেকেই এ বৈষম্য অবসানের উদ্যোগ নিতে হবে।
সমাজের অর্ধেক অংশকে অনগ্রসর রেখে একটি দেশ কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারে না। আমরা চাই, শিক্ষা এবং সামাজিক জীবনাচরণের সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত হোক।

No comments

Powered by Blogger.