ইউরোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে ওঠানামা

গত সপ্তাহে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের ব্যাপক চাহিদা দেখা গেছে। তবে বাজারে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল। সপ্তাহশেষে প্রতি মার্কিন ডলার ৬৯ টাকা ১৫ পয়সায় লেনদেন হয়। ফরোয়ার্ড বাজারে ডলারের দর টাকার বিপরীতে যথেষ্ট ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ সপ্তাহে (২৪ থেকে ৩০ অক্টোবর) আমদানিজনিত কারণে বাজারে ডলারের জোগান কমেছে বলে বাজার-বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
গত সোমবার ইউরোর বিপরীতে মার্কিন ডলার প্রায় ১৪ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইউরো ও ইয়েনের পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণায় এ দরপতন ঘটে বলে বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৮ সালের আগস্টের পর প্রথমবারের মতো প্রতি ইউরোর বিনিময় হার ১ দশমিক ৫০৬৪ ডলারের ওপর চলে যায়। আর প্রতি ডলার ৯১ দশমিক ৮৫ ইয়েনে লেনদেন হয়।
ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দর ডলারের বিপরীতে আগের সপ্তাহের সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি পাউন্ড স্টার্লিং ১ দশমিক ৬৩৩৪ ডলারে লেনদেন হয়।
গত মঙ্গলবার ইউরোর বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শেয়ারবাজারের নিম্নগতি ও কমোডিটি বা পণ্যের দর কমে যাওয়ায় ট্রেডাররা স্বল্প মেয়াদে মুনাফা উঠিয়ে নেওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এর ফলে প্রতি ইউরোর বিনিময় হার ১ দশমিক ৪৮৪৯ ডলারে নেমে যায়। ওই দিনই প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তার আস্থাসূচক প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ হওয়ায় ইউরো ১ দশমিক ৪৮০৬ ডলারে কেনাবেচা হয়।
গত বুধবার জাপানি ইয়েন ও মার্কিন ডলারের দর বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার ইউরো ১ দশমিক ৪৭০০ ডলারের নিচে চলে যায়। ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারসূচকের নিম্নমুখিতায় বৈশ্বিক মন্দা থেকে উত্তরণের প্রত্যাশা কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ‘সেফ হ্যাভেন’ বা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে ইউরোর দর কিছুটা পড়ে যায়।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হয়েছে—এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ফলে গত শুক্রবার ডলারের শক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
বাজারে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার মধ্যে গত সপ্তাহে সুইস ফ্রাঙ্কের বিপরীতে ইউরোর দর অনেক বেড়ে যায়। এ সত্ত্বেও সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বাজারে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে ইউরো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ সময় প্রতি ইউরোর বিনিময় হার ১ দশমিক ৫১৮০ ফ্রাঙ্কে ওঠে যায়।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে নিম্নমুখিতায় ডলার ও ইয়েনের দর বাড়ে। সপ্তাহশেষে প্রতি ইউরো ১ দশমিক ৪৭২১ ডলারে, প্রতি পাউন্ড স্টার্লিং ১ দশমিক ৬৪৪৫ ডলারে এবং প্রতি ডলার ৯০ দশমিক ১২ ইয়েনে লেনদেন হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে আগের সপ্তাহের মতো গত সোমবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি ৭৯ ডলারে কেনাবেচা হয়। গত মঙ্গলবার দাম খানিকটা পড়ে প্রতি ব্যারেল ৭৮ দশমিক ৫৫ ডলারে কেনাবেচা হয়। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে দাম আরও কমে প্রতি ব্যারেল ৭৭ দশমিক ১১ ডলারে কেনাবেচা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার খবর প্রকাশিত হয় গত শুক্রবার। এরপর অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলার ০৭ সেন্টে ওঠে যায়। তবে সপ্তাহশেষে তা ৭৬ দশমিক ৯৯ ডলারে নেমে আসে।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত সপ্তাহের শেষে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১০৪৫ দশমিক ৪০, প্রতি আউন্স রৌপ্য ১৬ দশমিক ৩৩ ও প্রতি টন কপার ৬৫৭৫ ডলারে কেনাবেচা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে কলমানির (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পর থেকে স্বল্পমেয়াদে নেওয়া কর্জ) সুদের হার আগের সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে কলমানির সুদের হার ছিল ১ দশমিক ৭৫ থেকে আড়াই শতাংশ। বাজারে তারল্যের যথেষ্ট জোগান ছিল।

No comments

Powered by Blogger.