আবার টাইব্রেকার, আবার মোহামেডান by মাসুদ আলম

ফেডারেশন কাপের শিরোপা থেকে গেল নিজেদের
ঘরেই। আহ, কী আনন্দ মোহামেডান খেলোয়াড়দের!
টাইব্রেকারে আবার জিতল মোহামেডান! ভাগ্যের পরশ পেয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফেডারেশন কাপ হাতে তুলল সাদা-কালোরা! টাইব্রেকারে আবার হেরে ধূলিসাত্ হয়ে গেল ৮ বছর পর আবাহনীর ফেডারেশন কাপ জয়ের স্বপ্ন!
বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। একটা দল বারবার টাইব্রেকারে জিতলে আর অন্য দলটা বারবার হারলে মনে হতে পারে, টাইব্রেকার আসলে ভাগ্য পরীক্ষা-টরিক্ষা নয়। টাইব্রেকার মানে মোহামেডানের জয়। টাইব্রেকার মানে আবাহনীর হার। তবে একটা সংশোধনী দিতে হচ্ছে, এই ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জিতেছে আবাহনী। ঘটনা হলো, এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মোহামেডানের কাছে টানা তিনবার টাইব্রেকারে হারল আকাশি-নীলেরা। সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্যের কী নিপুণ খেলা!
মোহামেডানের টাইব্রেকার ভাগ্যের ইতিবৃত্ত পরে বলা যাক, তার আগে জানিয়ে দিতে হচ্ছে—কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালের নির্ধারিত সময় ছিল গোলশূন্য। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কোনো দল গোলের দেখা পায়নি। জয়ীকে খুঁজে নিতে টাইব্রেকার হলো, আর তাতে ৪-১ গোলে জিতে ফেডারেশন কাপের দশম শিরোপাটা নিয়ে গেল মোহামেডান। শিরোপাটা অবশ্য তাদের হাতেই ছিল, গতবারের চ্যাম্পিয়নরা সেটা শুধু ধরে রাখল এই যা!
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের চিরন্তন উত্তেজনা ছিল এদিনও। আবাহনী গ্যালারি থেকে পানির বোতল ছুটল মাঠে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা ছিল উপভোগ্য। কিন্তু টাইব্রেকার শুরু হতেই নিস্তব্ধ আবাহনী গ্যালারি। দুই ঘানাইয়ান সামাদ আর শেরিফের নেওয়া প্রথম দুই শটে গোল হয়নি। নির্ভরযোগ্য স্টপার সামাদের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন মোহামেডানের নাইজেরিয়ান গোলরক্ষক পল। শেরিফ বল তুলে দিয়েছেন বারের ওপর দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে ওখানেই পড়ে যান এই স্ট্রাইকার। খানিক পরও তাঁর সাড়া না পেয়ে ডাকতে হয় স্ট্রেচার। পেনাল্টি মিস করে কোনো খেলোয়াড় স্ট্রেচারে শুয়ে মাঠ ছাড়ছেন, এই বিরল দৃশ্য দেখল হাজার তিরিশেক দর্শক। এটা হতেই পারে, খেলোয়াড়েরা তো আর আবেগের ঊর্ধ্বে নন!
প্রথম দুটি শটে গোল না হওয়া মানে প্রতিপক্ষের হাতের মুঠোতেই ম্যাচ তুলে দেওয়া। সেটাই হলো, তবে টাইব্রেকারে মোহামেডান খেলোয়াড়েরা স্নায়ুচাপটা ধরে রাখলেন দারুণ। আরিফ, এমেকা, ওয়ালি ফয়সাল গোল করার পর চতুর্থ শটটা নিলেন ম্যাচের প্রায় শেষ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার হাসান আল মামুন। তিনি গোল করার পর মোহামেডানের বিজয় উত্সব শুরু, যা থামিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের আনতে কষ্টই হলো আয়োজকদের।
টাইব্রেকারে যাওয়ারই দরকার হতো না, যদি অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে আবাহনীর বদলি স্ট্রাইকার এনামুল ফাঁকা পোস্টে লক্ষ্যভেদী হেড নিতে ব্যর্থ না হতেন। পোস্টে নয়, হেডটা তিনি করলেন মাটিতে! অবিশ্বাস্য!
শুরুর মিনিট দশেক পরই খেলাটা ধরে নেয় আবাহনী। মোহামেডানকে পাল্টা জবাব দিয়ে আক্রমণে গেছে তারা। কখনো কখনো প্রাধান্যও ছিল। তবে সমস্যা হচ্ছে, মোহামেডানের পোস্টে হাতে গোনা তিন-চারটির বেশি শট নিতে পারেনি আবাহনী। তার ওপর শেরিফের একটা হেড লাগে ক্রসবারে। আগের ম্যাচে দু গোল দেওয়া এনামুলকে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত বসিয়ে রেখে আদতে দলের জন্য লাভ কিছু হয়নি। ইব্রাহিম ফাইনাল পাস না দিতে পারলে আবাহনী প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলতে পারে না, বরাবরের মতো এদিনও তা দেখা গেছে। শুরুতে গোলরক্ষক বিপ্লবও ভুগছিলেন আস্থার অভাবে। এর ফলে দু-একবার তো গোল প্রায় হয়েই যাচ্ছিল!
মোহামেডান ফেবারিট ছিল ম্যাচে। কিন্তু যতটা গর্জেছে, ততটা বর্ষেনি মাঠে। মোহামেডানের মাঝমাঠকে তো প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমেকা ১২০ মিনিট খেলে কটি বল ধরেছেন, গুনে বলে দেওয়া যায়। এমিলিও ছন্দে ছিলেন না। তবে বুকোলা বিপজ্জনকই ছিলেন। আবাহনীর চেয়ে মোহামেডান অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করেছে। আবাহনীর কৃতিত্ব—বুকোলাকে তারা গোল করতে দেয়নি।
গত ফেডারেশন কাপের ফাইনাল, তার আগে প্রদর্শনী সিরিজ, সর্বশেষ কাল আবার—এই হলো আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের টানা তিন টাইব্রেকার জয়। গত বছর সুপার কাপের সেমিফাইনালে আমিনুল-বীরত্ব, এই ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পল-কৃতিত্বে আরেকটি টাইব্রেকার জয় ছিল মোহামেডানের। মোহামেডান বোধহয় এরপর টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ালে ভাগ্যের হাতে সব ছেড়ে দেবে না। ভাগ্য যেন তাদের সঙ্গেই থাকে!
মোহামেডান: পল, ওয়ালি ফয়সাল, আরিফ, মামুন মিয়া (হাসান আল মামুন), নাসির, আরমান আজিজ (শরীফ), মামুন, জাহিদ (কমল), এমেকা, এমিলি, বুকোলা।
আবাহনী: বিপ্লব, সিরাজী, সামাদ, রজনী, আতিকুর, মেহেদি (মতিউর মুন্না), প্রাণতোষ, শাহেদ, জাহেদ, শেরিফ, ইব্রাহিম (এনামুল)।
রেফারি: তৈয়ব হাসান।

No comments

Powered by Blogger.