এসএ গেমস সাঁতারে পুরোনো স্কোরবোর্ড!

১৬ বছর আগের অকেজো ইলেকট্রনিক বোর্ড আবার মেরামত করা হচ্ছে। কিন্তু মিরপুর সুইমিং পুলের ইলেকট্রনিক বোর্ডটা মাঝখানে কয়েকবার সচল করার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হয়েছে। দু-একদিন সচল থাকলেও ওটা ফিরে গেছে আগের চেহারায়।
এটিকে বাতিলের খাতায় ফেলে আসন্ন এসএ গেমসের জন্য নতুন ইলেকট্রনিক বোর্ড আনার প্রক্রিয়া এগিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর। সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গত পরশু এসএ গেমসের স্টিয়ারিং কমিটির সভায়। বিকল্প হিসেবে সামনে এসেছে ‘মেরামত-তত্ত্ব’। পুরোনোটিই এখন মেরামত করা হবে!
স্টিয়ারিং কমিটির সভায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আবদুর রহমান ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে বলেছেন, পুরোনো বোর্ডের একটি লেন নিয়ে সমস্যা আছে। বাকি সবই ঠিক। কাজেই ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করলে এটা সারিয়ে তোলা সম্ভব। মন্ত্রী তখনই মত দেন, নতুন আনার দরকার নেই। পুরোনোটাই সারিয়ে তোলা হোক। সভাসূত্রের খবর, মন্ত্রী বলেছেন, নতুন বোর্ড আনতে অনেক টাকা দরকার। সেই টাকা নাকি সরকারের নেই!
গেমসের জন্য ব্যয় হবে প্রায় দুই শ কোটি টাকা। অথচ যে ইভেন্টে বাংলাদেশের সোনা জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল, সেই সাঁতারই ‘টাকার অভাবে’ নতুন ইলেকট্রনিক বোর্ড পাচ্ছে না। মিরপুর সাঁতার কমপ্লেক্সের বর্তমান বোর্ডটি বিশ্বখ্যাত ওমেগা কোম্পানির। নতুনটি ছিল এএলজি, আনার কথা ছিল চীন থেকে। সেটির জন্য বরাদ্দ ছিল দেড় কোটি টাকার মতো। বর্তমানে ওমেগার মূল্য ৫ কোটি টাকা, সেটা দূরে থাক, এখন দেড় কোটির বোর্ডও পাওয়া যাচ্ছে না!
কেন হঠাত্ করেই ইলেকট্রনিক বোর্ড আনার সিদ্ধান্ত বাতিল হলো? বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সিইও কর্নেল (অব.) ওয়ালি উল্লাহ বলছেন, ‘ওমেগা আনতে হবে এমন কথা নেই। তবে অন্য কোম্পানির বোর্ড আনলে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে সমস্যা হতে পারে। তখন ফিনার অনুমোদনেরও ব্যাপার থাকতে পারে। যা-ই হোক, এখন এনএসসি বলছে, এটা মেরামত করা যাবে। সে জন্যই আগের পরিকল্পনা বাদ।’
নতুন না পুরোনো—এই সিদ্ধান্ত কি আরও আগেই নেওয়া যেত না? শেষ মুহূর্তে কেন এই ভজকট? সাঁতার ফেডারেশন সদস্য ও কোচ আমিরুল ইসলাম বলছেন, ‘এটা তো আমাদেরও প্রশ্ন। ২০০৬ সাল থেকেই সাঁতার ফেডারেশন ওমেগা আনার জন্য বলে আসছে এনএসসিকে। অনেক চিঠিপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এনএসসি দেড় কোটি টাকা মূল্যের এএলজি আনার জন্য দরপত্র ডাকে। এখন শুনছি, পুরোনোটাই মেরামত করা হবে। নতুন দিলে দেশের জন্যই ভালো হতো।’
নতুন বোর্ড আনা হচ্ছে না জেনে সাঁতারুরা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। জুয়েল আহমেদ বললেন, ‘ইন্দো-বাংলা গেমসের সময়ও এটা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু এই বোর্ড টাইমিং ঠিকমতো ধরতে পারেনি। কাজেই এটা দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না। বিদেশিদের সামনে মানসম্মান হারাতে হবে।’ গত এসএ গেমসে সোনাজয়ী শাহজাহান আলী রনি দুঃখ পেয়েছেন সরকারের এমন মানসিকতায়, ‘সাঁতারে এক সেকেন্ডের এক শ ভাগ ভাগও অনেক সূক্ষ্মভাবে ধরতে হয়। আধুনিক বোর্ড ছাড়া এটা সম্ভবই নয়। পুরোনো বোর্ড দিয়ে কাজ চালালে বিরাট সমস্যা হবে। এটা সাঁতারের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আশায় ছিলাম, নতুন বোর্ড পাব, এখন তো শুনছি উল্টোটা।’
জুয়েলের আশঙ্কা গোটা সাঁতার অঙ্গনেরই আশঙ্কা। প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে, আর এসএ গেমস হবে কি না ১৬ বছর আগের ইলেকট্রনিক বোর্ডে! ঘরোয়া প্রতিযোগিতার সময়ই যে বোর্ড সচল করা যায় না, মেরামত করলে সঙ্গে সঙ্গেই বিকল হয়ে যায়, সেই বোর্ডেই কি না এসএ গেমস!

No comments

Powered by Blogger.