শুরুটা করে দিলেন ফয়সাল by আরিফ রনি

ছবিটাকে প্রতীকী বলতে পারেন। বিসিবি একাদশকে
জিম্বাবুয়ের নাগালের বাইরে নিয়ে গেলেন ফয়সাল হোসেন
খেলা শেষে সোজা ড্রেসিংরুমে ফিরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে গেল গোটা জিম্বাবুয়ে দল। ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে ফেবারিট মেনেই নিয়েছে তারা, তাই বলে বিসিবি একাদশের কাছে এমন পরাজয়! তাই শুরু হয়ে গেল পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়া। প্রতিক্রিয়া জানার জন্যও কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ড্রেসিংরুমে ঢুকতে খানিকটা দেরি করে ফেলা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলকেই পাকড়াও করতে হলো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার জন্য, ‘আসলে এই উইকেটে ২৭০-৮০ রান হতো ভালো স্কোর। এই রান নিয়েও যে ছেলেরা জেতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল, এটা একটা ইতিবাচক দিক।’
জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচকের কথাতেই পরিষ্কার ফুটে উঠছে ম্যাচের ছবিটা। ফতুল্লার ব্যাটিং উইকেটে টস-ভাগ্য সহায় ছিল প্রসপার উতসেয়ার। কিন্তু বিসিবি একাদশের পেসারদের দাপটে (ভুল পড়েননি, স্পিনার নয়, পেসারদের দাপটেই) ব্যাটসম্যানে ঠাসা জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে গেল মাত্র ২০৬ রানে। তবে এমন উইকেটেও এবং এই রান নিয়েও হান্নান সরকারের দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ফয়সাল হোসেন ও সগীর হোসেনের ৮৫ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত জয়টা এসেছে ৩১ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখেই।
প্রস্তুতি ম্যাচের উদ্দেশ্য সাধারণত বিদেশি দলগুলোর জন্য সাধারণত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া আর স্বাগতিক দলের জন্য ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের লড়াই। জিম্বাবুয়ের উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে এটা বলা মুশকিল, তবে সফল বিসিবি একাদশের বেশ কয়েকজন। ৩টি করে উইকেট নিয়ে কালকের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক দুই পেসার তারেক আজিজ ও তালহা জুবায়ের। আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অপরাজিত ৮১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে জয়ের মূল নায়ক ফয়সাল।
ম্যাচের শুরুটা ছিল নাটকীয়। তারেক আজিজের করা ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লুর জোরালো এক আবেদন থেকে বেঁচে যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। দারুণ এক কভার ড্রাইভে চার মেরে জবাবটা পরের বলেই দিয়ে দেন ইন-ফর্ম এই ব্যাটসম্যান। চতুর্থ বলে একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে বেঁচে যান রানআউটের হাত থেকে। দলীয় ৩৬ রানে প্রথম আউটও এই মাসাকাদজাই।
মুতিজাওয়াকে আউট করে দিনের দ্বিতীয় উইকেটটিও তালহার। এর পর ওয়ানডে দল থেকে সদ্য বাদ পড়া মাহবুবুল চিবাবাকে আউট করে ৩ উইকেটে ৭৭ বানিয়ে দেন জিম্বাবুয়ের স্কোর। এর পরই টাইবু ও টেলরের ৫১ রানের জুটি। টেলর ৩৬ রানে ফিরে গেলেও এক প্রান্ত আঁকড়ে ছিলেন টাইবু। ৪০তম ওভারের শুরুতে জিম্বাবুয়ে ৬ উইকেটে ১৯৩—আড়াই শ-টাড়াই শ তখন খুবই সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। তবে ১৫ বলের এক ঝড়ে আর মাত্র ১৩ রানেই ইনিংস শেষ করে দিয়েছে স্বাগতিক দল। নয় বলে ৩ উইকেট নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক তারেক।
সেই আনন্দ বিসিবি একাদশের ইনিংসের শুরুতে প্রায় উধাও হয়ে যেতে বসেছিল। ৫৩ রানে নেই ৪ উইকেট। ইমরুল, নাফিস ও শামসুর উইকেট উপহার দিয়ে এলেন চিবাবার স্লো মিডিয়ামে, অধিনায়ক হান্নান সরকার প্রথম বলেই এলবিডব্লু। ১২২ রানে ৬ উইকেট পরে যাওয়ার পর ফয়সাল ও সগীরের ওই জুটি। শুরুতে দুজনেই খেলেছেন দেখেশুনে। পাল্টা আক্রমণটা প্রথম চালান সগীর, পরে যোগ দেন বাঁহাতি ফয়সালও। ক্রেমারকে মারা ফয়সালের একটি ছয় আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে। মাঠে উপস্থিত হাজার দুয়েক দর্শককে উল্লাসে ভাসিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় ফয়সালের চেহারায় ছিল স্বস্তি, কিন্তু কণ্ঠে ছিল আক্ষেপ, ‘আরে, আমরা তো বুড়া হয়ে গেছি।’
একই আক্ষেপ কি তালহা-তারেকদেরও আছে?

No comments

Powered by Blogger.