বিরোধীরা ছন্নছাড়া, তাই তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জয়

লোকসভা নির্বাচনের পাঁচ মাস পরও মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও অরুণাচল প্রদেশে বিরোধী রাজনৈতিক জোট ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের ওই বিশৃঙ্খল অবস্থার সুযোগে ওই তিনটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে গেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট। বিশ্লেষকেরা তাই মনে করছেন, কংগ্রেসের ওই বিজয় যতটা না কৃতিত্ব তাদের, তার চেয়ে বেশি দায় বিরোধীদের ছন্নছাড়া অবস্থা। কারণ তারা ওই তিন রাজ্যে লড়াইয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
অনেকে মনে করছে, ওই ভোট আরও প্রমাণ করেছে, শিবসেনা ও বিজেপির ‘প্রান্তিক ও চরম সাম্প্রদায়িক’ দর্শনকে ভোটারেরা আরও একবার বর্জন করেছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে সোনিয়া-মনমোহন-রাহুলের সর্বভারতীয় বহুত্ববাদী ভাবমূর্তির জয় হয়। তিন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনেও সেই ধারা বজায় থাকল।
১৩ অক্টোবর ওই তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ফলাফল গণনায় দেখা গেছে, মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসনের মধ্যে কংগ্রেস-এনসিপি পেয়েছে ১৪৬টি, বিজেপি-শিবসেনা ৯১টি। হরিয়ানায় ৯০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৪০, ভারতীয় জাতীয় লোকদল (আইএনএলডি) ৩২ ও বিজেপি পেয়েছে মাত্র চারটি। অরুণাচলে কংগ্রেস ৪২, তৃণমূল পাঁচ ও বিজেপি পেয়েছে মাত্র দুটি আসন।
এবার পরিস্থিতি মোটেও কংগ্রেসের অনুকূলে ছিল না। মুম্বাইয়ে হামলার ঘটনা, খরা, অসহায় কৃষকদের আত্মহত্যা, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় কংগ্রেস বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে কোনো ইস্যুকেই কাজে লাগাতে পারেনি বিরোধীরা। নিজেদের অন্তর্কোন্দল এর জন্য দায়ী। মহারাষ্ট্রের কথাই ধরা যাক, সেখানে শিবসেনা হলো রাজ্যের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু তাদের মধ্যে চলছে এখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। শিবসেনাপ্রধান বালসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব আর ভাইপো রাজের কলহে দল ভেঙেছে আগেই। গত লোকসভায়ও রাজের দল (মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা—এমএনএস) নিজের নাক কেটে উদ্ধবের যাত্রা ভঙ্গ করেছিল। এবারও তাই হয়েছে। দুই ভাইয়ের ঝামেলা আর মেটেনি।
শিবসেনার মতো বিজেপির নিজের অবস্থাও তথৈবচ। নিজেদের মধ্যে ফ্যাসাদের কারণে কোথাও তারা ভোটের জন্য ঝাপিয়ে পড়তে পারেনি। ভোটের মাঠে যখন লড়াই চলছে, তখন দলের নেতারা ব্যস্ত লালকৃষ্ণ আদভানি ইস্তফা দিচ্ছেন কি না, কিংবা রাজনাথ সিংকে সরিয়ে সভাপতি কাকে করা হবে, তা নিয়ে।
হরিয়ানায় ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল গুনেছে বিজেপি। ভোটের আগ পর্যন্তও ওমপ্রকাশ চৌটালার সঙ্গে জোট ছিল বিজেপির। কিন্তু মতপার্থক্যের কারণে চৌটালার সঙ্গ ত্যাগ করে তারা অন্যদের সঙ্গে জোট করে। ফলে দুই কূলই গেছে বিজেপির। চৌটালার দল জিতে গেছে ৩২টি আসনে।
জয়ী হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতির ছেলে
আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় জয় ছিনিয়ে আনলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবী সিং পাতিলের ছেলে রাজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। কংগ্রেসের টিকিটে রাজেন্দ্র সিং দাঁড়িয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের অমরাবতী কেন্দ্র থেকে।
জয়ী হওয়ার পর শেখাওয়াত বলেছেন, তাঁর জয়ের পেছনের কারিগর ছিলেন মহিলা ভোটাররা। তাঁরাই বিপুল ভোটে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁকে।
মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির ছেলে ছাড়াও জয়ী হয়েছে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের ছেলে অমিত দেশমুখ, কংগ্রেস নেতা সুশীল কুমার শিন্ডের মেয়ে প্রণীতি, এনসিপির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী ছগন ভুজবলের ছেলে পঙ্কজ ভুজবল। তবে হেরে গেছেন প্রয়াত বিজেপি নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনম।

No comments

Powered by Blogger.