হামাস মৃত সব জিম্মির মৃতদেহ ফেরত না দিলে ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করবে
ওদিকে হামাস আরও দুই ইসরাইলি জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা স্বীকার করেছে বাকিদের মৃতদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তা সনাক্ত করতে এবং উদ্ধার করতে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তাদের। তবে ইসরাইলের এক কথা, যদি ২৮ জিম্মির সবার মৃতদেহ ফেরত না দেয় হামাস, তাহলে গাজায় শান্তি পরিকল্পনা পরবর্তী দফায় যাবে না।
ওদিকে ইসরাইলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি মারওয়ান বারগোতিকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বৃটিশ এমপি ইলি চৌন। এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ফিলিস্তিনিদের একীভূত করার শক্তিশালী এক কণ্ঠ মারওয়ান বারগুতি। তিনি এ অঞ্চলে অর্থপূর্ণ ও টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। মারওয়ান বারগুতিকে বিনা বিচারে ২০০২ সাল থেকে ইসরাইলে বন্দি রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তার মুক্তি হওয়া উচিত।
অন্যদিকে গাজার কিছু এলাকায় আবার ইসরাইলি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে জাতিসংঘের একটি এজেন্সি অভিযোগ করেছে, গাজার ওইসব এলাকায় অব্যাহতভাবে ইসরাইলি বাহিনী বেসামরিক মানুষদের হত্যা করছে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলা থেকে জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন ইসরাইলের সেনাপ্রধান ইয়াল জামির।
ওদিকে সাংবাদিকদেরকে ইসরাইলের অবৈধ অপহরণ, আটক রাখা ও অশোভন আচরণের নিন্দা জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিওকে চিঠি লিখেছে ডিফেন্ডিং রাইটস অ্যান্ড ডিসেন্ট-এর নেতৃত্বে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক একটি গ্রুপ। এ মাসের শুরুর দিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নিয়ে রিপোর্ট করতে গেলে মার্কিন তিন সাংবাদিক ড্রপ সাইট নিউজের অ্যালেক্স কোলস্টোন, নোয়া আভিশাগ শনাল এবং জিউস কারেন্টের সাংবাদিক এমিলি ওয়াইল্ডারকে আটক করে ইসরাইল।
চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন সাংবাদিকদের জন্য সুপারিশ করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তবে এখনও যুক্তরাষ্ট্র এসব বেআইনি আটকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো নিন্দা জানায়নি। ওদিকে গাজা চুক্তির পর ইসরাইলের ওপর থেকে আংশিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জার্মানি প্রত্যাশা করে বলে আশা করছে ইসরাইল। ইসরাইলের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হ্যাসকেল বলেন, তার দেশ আশা করে ইসরাইলের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে জার্মানি। একই সঙ্গে ভ্রমণ সতর্কতাও প্রত্যাহার করবে।
হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগকে হালকাভাবে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে এমন অভিযোগকে হালকাভাবে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, মৃত সব জিম্মির দেহ ফেরত দিচ্ছে না হামাস। তারা বলছে, অনেকের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তা সনাক্ত করতে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি লাগবে। কিন্তু ইসরাইল এটাকে কৌশল হিসেবে দেখছে। ফলে তারা গাজায় আবার যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র হামাসের বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগকে হালকাভাবে নিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এ পর্যন্ত ২৮ জন মৃত জিম্মির মধ্যে মাত্র ৯ জনের দেহ ফেরত দিয়েছে হামাস। ওদিকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে, বুধবার ফেরানো দুইটি দেহই শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, ইনবার হাইম্যান এবং সার্জেন্ট মেজর মুহাম্মদ আল-আত্রেশ।
মৃতদেহ ফেরানোর বিতর্কের কারণে ইসরায়েল গাজায় প্রতিশ্রুত সহায়তা সরবরাহ সীমিত করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দুইজন সিনিয়র উপদেষ্টা বলেছেন, গাজা ধ্বংসস্তরকে নিরস্ত্রীকরণ এবং একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনা চলমান। ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়নের আপডেটে, উপদেষ্টা দু’জন জানিয়েছেন- মার্কিন সরকার এখনও বিশ্বাস করছে না যে হামাস আরও দেহ উদ্ধার না করায় চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, হামাস জীবিত সমস্ত জিম্মিকে ফেরানোর মাধ্যমে সৎ মনোভাব দেখিয়েছে। বাকি মৃতদেহ উদ্ধারে বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে কাজ করছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তারা যেসব জিম্মির দেহ পেয়েছে সেগুলো ফেরত দিয়েছে।
একজন সিনিয়র মার্কিন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গাজায় ধ্বংসের মাত্রার কারণে সমস্ত দেহ উদ্ধার হতে সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, তথ্য দেওয়ার জন্য গাজার নাগরিকদের পুরস্কার দেয়া হতে পারে এবং তুর্কি বিশেষজ্ঞরাও অনুসন্ধানে যোগ দেবেন। আইডিএফ বিবৃতিতে বলেছে, হামাসকে চুক্তির অংশ পূরণ করতে হবে এবং সমস্ত জিম্মিকে তাদের পরিবারে ফেরাতে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জিম্মি পরিবারের ফোরাম বিবৃতিতে বলেছে, জিম্মি ও মুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবাররা ইনবার হাইম্যান এবং মুহাম্মদ আল-আত্রেশের পরিবারকে গ্রহণ করছে।

No comments