মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নামে আপাতত শুধুই ‘শব্দ-বিস্ফোরণ’

ডনের সম্পাদকীয়ঃ বিশ্বনেতারা যখন মিশরের লোহিত সাগর তীরবর্তী রিসোর্ট শার্ম আল-শেখে জড়ো হয়েছিলেন তখন সেখানে ভূ-রাজনৈতিক নাটকের মঞ্চায়ন এবং অতিশক্তিই যেন বাস্তবতার স্থান দখল করে নিল। সমবেত বিশিষ্টজনেরা মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ উদ্‌যাপন করলেন। দলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হামাস-ইসরাইল সংঘাত ও গাজা শান্তি পরিকল্পনার উল্লেখ করে আত্ম-অভিনন্দনের মুহূর্তে ঘোষণা করেন, অবশেষে  দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে। যদিও দূরদর্শী লক্ষ্য এখনও অধরা।

প্রাথমিকভাবে গাজায় গণহত্যা নিশ্চিতভাবে থামলেও  অধিকৃত ফিলিস্তিনে একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি অর্জন এখনও বহু দূরের বিষয়। গাজা পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছেন। যার মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাও রয়েছে। পাক নেতা আবারও ট্রাম্পকে নোবেল দেওয়ার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তাকে‘লাখ লাখ’ জীবন বাঁচানোর’ কৃতিত্ব দেন। যদিও ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার সারবস্তু সামান্যই।

প্রথমত, একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো স্পষ্ট পথরেখা ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নেই। যদিও মিশরের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, এই চুক্তি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শান্তির জন্য আরও বিস্তৃত ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিও দ্বিতীয় ইন্তিফাদার বিশৃঙ্খলার মধ্যে ভেঙে পড়ে। এর প্রধান কারণ ছিল প্রকৃত শান্তির প্রতি ইসরাইলের আন্তরিকতার অভাব।

তদুপরি, গাজার উপর নজরদারি করার জন্য বিদেশি শাসন, ঔপনিবেশিক প্রশাসনের ধারণা এবং বিদেশি সৈন্য মোতায়েনের বিষয়টিও রয়েছে। যা গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে হয়। এই অঞ্চলের সঙ্গে পরিচিতদের লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ‘শান্তিরক্ষীদের’ সংশ্লিষ্টতার কথা মনে রাখা উচিত।  ইরাকে ‘জাতি গঠন’-এর ব্যর্থতাও ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

সংক্ষেপে, গাজা বা পশ্চিম তীর—কোনোটাই বিদেশি বাহিনীর দ্বারা শাসিত হওয়া উচিত নয়। সব মতের ফিলিস্তিনি দলগুলোর একত্রিত হওয়া এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের ভূখণ্ড নিজেরাই পরিচালনা করা উচিত।

আরেকটি সত্য হচ্ছে শার্ম আল-শেখের এই ‘শান্তি’ উদ্‌যাপনের মাঝে গাজায় গণহত্যার বিষয়ে ইসরাইলের  কোনো জবাবদিহিতার উল্লেখ ছিল না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই জায়নবাদী রাষ্ট্রটি দশকের বেশি সময় ধরে এমনভাবে কাজ করছে যেন তারা আইনের ঊর্ধ্বে। নাকবা’র সময় থেকে শুরু করে তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা, অঙ্গহানি এবং জমি দখল করে চলেছে। ইসরাইল তাদের পূর্বের দায়মুক্তির জন্য শাস্তি না পাওয়ায়, তারা গাজায় হত্যাকাণ্ড চালাতে এমন এমন সাহস দেখিয়েছে।

এই অঞ্চলে যদি প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয় তবে দুটি বিষয় অপরিহার্য। প্রথমত, তেল আবিবে যারা হাজার হাজার গাজাবাসীর হত্যা ও অনাহারের জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিশ্বকে অঙ্গীকার করতে হবে যে গাজার মতো আরেকটি গণহত্যা আর কখনও হবে না। দ্বিতীয়ত, একটি সার্বভৌম ও কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দিকে একটি দৃঢ় পথরেখা তৈরি করতে হবে। এর চেয়ে কিছু কম হলে তা কেবল সহিংসতার চক্রকেই স্থায়ী করবে। কারণ ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার দিতে অস্বীকার করছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.