হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তিতে বিলম্ব করলে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বিলম্ব করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। তারা জাতিসংঘকে জানিয়েছে, বুধবার থেকে অনুমোদিত ট্রাকের সংখ্যা সীমিত করা হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। এতে বলা হয়েছে, হামাসের কাছ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত তিন জিম্মির নাম প্রকাশ করেছে দখলদাররা। তাদের এক সূত্র জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে হামাস আজ আরও কয়েকটি মৃতদেহ হস্তান্তর করবে। এ পর্যন্ত ২৮ জন মৃত জিম্মির মধ্যে মাত্র ৮ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, মিশরে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে।
 |
| গাজাবাসীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফিরেছে, মাথা নত করেনি, আশা হারায়নি। ছবি: এএফপি |
ত্রাণ সরবরাহ বিলম্বের কথা ইসরাইল জানিয়েছে কিনা এ বিষয়ে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র কে জিজ্ঞাসা করা হয়। ইসরাইল জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা বুধবার থেকে ৩০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশে অনুমতি দেবে। প্রথমে ওই সংখ্যা ছিলো ৬০০। আরও বলা হয়েছে, উপত্যকাটিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো প্রকার গ্যাস বা জ্বালানি সরবরাহ করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার কথা ছিলো। গতকাল ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হলেও বাকি ২৮ জন মৃত জিম্মির মধ্যে মাত্র চারজনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
 |
| গাজার খান ইউনিস থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের পর ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। দোকানগুলো পুনরায় চালু হয়েছে। |
 |
| সেখান থেকে তারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছেন। ভাঙ্গাচোরা ভবনগুলোর মাঝেই সবজি, ফল ইত্যাদির দোকান বসানো হয়েছে। |
 |
এতদিন গাজায় খাদ্য সরবরাহে বাধা দিয়ে এসেছে দখলদাররা। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে ওই অবরোধ তুলে নেয়া হয়েছে। যার কারণে সাধারণ জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করতে পারছেন।
|
 |
| যেন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মানুষ উঠে আসছে। যেন মৃতদেহ হঠাৎ পুনর্জীবন পেয়েছে। ছবি: এএফপি |
 |
| মানবতার এমন পুনর্জন্ম পৃথিবী কমই দেখেছে। মনে হলো, গাজা যেন কবর থেকে উঠে ঘোষণা দিচ্ছে—‘আমি বেঁচে উঠেছি আবারও!’ ছবি: এএফপি |
 |
| গাজার বিধ্বস্ত শহরগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করছে হামাস। গতকাল মঙ্গলবার সশস্ত্র গোষ্ঠীটি গাজায় অভিযানে নেমেছে। বিরোধীদের সহযোগিতা করেছে, এমন অভিযোগে কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে তারা। এদিকে হামাস তাদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চোখ বাঁধা ও মাটিতে হাঁটু গেড়ে থাকা আটজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। হামাস ওই ব্যক্তিদের ‘বিরোধীদের সহযোগী ও অপরাধী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজটি খুব সম্ভবত সোমবার সন্ধ্যার। এই ভিডিও থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামাসের বিভিন্ন নিরাপত্তা ইউনিট এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গাজা নগরী থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাস সরকারের কালো মুখোশধারী সশস্ত্র পুলিশ আবার রাস্তায় পাহারা দিতে শুরু করেছে। সোমবার যখন ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের বাসে করে গাজায় আনা হয়, তখন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এ ছাড়া হামাসের একটি নিরাপত্তা ইউনিট গাজায় অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। হামাসের অভিযোগ, এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর কেউ কেউ ইসরায়েলের সমর্থন পেয়েছে। মোহাম্মদও নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমরা তীব্র গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা এটি সমর্থন করি।’ গাজার একটি নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে বলেছে, হামাসের একটি নিরাপত্তা ইউনিট গাজায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করছে। সম্প্রতি গঠিত এই ইউনিটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতিরোধ বাহিনী’। ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘আমাদের বার্তা একেবারে পরিষ্কার। যারা অপরাধী অথবা নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করবে, গাজার মাটিতে তাদের কোনো স্থান নেই।’ |
No comments