বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ: মন্ত্রীর পদ থেকে রুশনারা আলীর পদত্যাগ by আরিফ মাহফুজ

স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বৃটিশ সরকারের মন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি নির্বাচনী আসনে লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত বৃটেনের লেবার সরকারের হোমলেসনেস (গৃহহীনতা) মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার পদত্যাগের বিষয়টি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট নিশ্চিত করেছে।

হঠাৎ করেই মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ কারণ হিসেবে জানা যায়, লন্ডনে নিজের মালিকানাধীন একটি বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ ওঠার পর বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার প্রেক্ষিতে গৃহহীনতাবিষয়ক একাধিক দাতব্য সংস্থা এবং বিরোধী দলীয় রাজনীতিকরা তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রুশনারা আলীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার ঝড় ওঠার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে আলী লিখেন, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আমি বিশ্বাস করি, আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি এবং প্রমাণও তাই বলে। তবে স্পষ্ট যে, আমার অবস্থানে থাকা সরকারের কাজকে বিভ্রান্ত করছে।’

প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রুশনারা আলীর কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘‘রুশনারা আলীর ‘পরিশ্রমী’ ভূমিকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতেও তিনি ব্যাকবেঞ্চ থেকে সরকারের কাজকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।’’

ঘটনার মূল প্রেক্ষাপট

‘দ্য আই পেপার’-এর অনুসন্ধানে উঠে আসে রুশনারা আলী পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়ির ফিক্সড টার্ম কনট্র্যাক্ট বাতিল করে সেটি বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই ওই বাড়িটি আবার ভাড়া দেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়—এবার আগের চেয়ে প্রতি মাসে ৭০০ পাউন্ড বেশি ভাড়ায়।

সাবেক এক ভাড়াটে জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাকে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বলা হয়, বাড়ির লিজ নবায়ন হবে না। তিনি ও বাকি তিন ভাড়াটে বাড়ি ছাড়ার পর সেই বাড়িটিই আবার নতুন করে ভাড়া দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, রুশনারা আলী নিজেই একটি আইনের (রেন্টারস রাইটস বিল) পক্ষে কাজ করছিলেন, যার মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি—যেখানে বাড়ি বিক্রির কথা বলে ভাড়াটেদের তাড়িয়ে পরে সেটি আবার বেশি ভাড়ায় দেয়া হয়—নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া

লন্ডন রেন্টারস ইউনিয়নের মুখপাত্র সিয়ান স্মিথ বলেন, ‘‘রুশনারা আলীর কর্মকাণ্ড ‘অপমানজনক’ এবং ‘স্পষ্ট স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ তৈরি করেছে।’’ রেন্টারস রিফর্ম কোয়ালিশনের পরিচালক টম ডার্লিং বলেন, ‘‘তার পদত্যাগ ‘ঠিক সিদ্ধান্ত’ এবং ‘তার অবস্থান সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছিল, কারণ তিনি যে আইনের পক্ষে ছিলেন, সেটির বিরুদ্ধেই কাজ করেছেন তিনি।’’

কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হোলিনরেক বলেন, ‘এই ঘটনা লেবার পার্টির সরকারে দ্বিচারিতা এবং আত্মসেবামূলক আচরণের দৃষ্টান্ত।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাটের এক মুখপাত্র বলেন, ‘তার দায়িত্ব ছিল গৃহহীনতা দূর করা, বাড়ানো নয়। তার এমন আচরণ রাজনৈতিকভাবে জনগণের প্রতি এক চরম অবহেলার বার্তা দেয়।’

আগেও বিতর্কে ছিলেন রুশনারা

এটাই প্রথম নয়—গত বছরও রুশনারা আলীকে তার মন্ত্রণালয়ের একটি অংশের দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছিল। তিনি একটি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন, যা গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডিতে অভিযুক্ত এক কোম্পানির মূল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘ধারণা বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ’—এই যুক্তিতে তিনি বিল্ডিং সেফটি সংক্রান্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

রুশনারা আলী বাংলাদেশের সিলেটি বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ এমপি। ২০১০ সালে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন ধরে বৃটেন ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন।

mzamin
রুশনারা আলী।

No comments

Powered by Blogger.